নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার জোতবাজারে আত্রাই নদীর ওপর সোজা দাঁড়িয়ে আছে একটি সেতু। এটি নির্মাণ করতেও সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই কাজ গুটিয়ে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হলেও এলাকবাসীর কোনো কাজে তো আসছেই না, বরং তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেতুটি। সেতুতে উঠবে কীভাবে- তা নিয়েই যত চিন্তা নিয়মিত চলাচল করা দুপারের বাসিন্দাদের।
একান্ত নিরুপায় হয়ে সেতুতে উঠতে বিকল্প ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা। খেয়াঘাটের মাঝি ও স্থানীয়দের উদ্যোগে সেতুতে ওঠার জন্য তৈরি করা হয়েছে বাশেঁর চাটাই। তা দিয়ে পূর্ণবয়স্ক ও সুস্থ মানুষেরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও শিশু ও অসুস্থদের জন্য এ সুবিধা থেকে গেছে অধরা। আবার সন্তানকে সেতু দিয়ে নদী পারাপারে পাঠিয়ে অনেক অভিভাবককে থাকতে হচ্ছে দুশ্চিন্তায়।
সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় তাই ঝুঁকি নিয়ে চাটাই বেয়ে উপরে উঠে তারপর পারাপার হতে হচ্ছে চলাচলকারী মানুষদের। আবার চাটাই তৈরির খরচ জোগাতে কিছু সুবিধাভোগীদের নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে টোল। অন্যদিকে, সেতু হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছে জোতবাজার খেয়াঘাটের পারাপার। ফলে নূরুল্যাবাদ, কসব, কাশোপাড়া, প্রসাদপুর ইউনিয়ন এবং বাগমারা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে।
স্থানীয়রা জানান, উপকরণের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অজুহাতে সেতুটির নির্মাণ কাজ দফায় দফায় বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে সেতুর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা হলেও সংযোগ সড়ক না করেই কাজ গুটিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তাই এলাকাবাসী ও খেয়াঘাটের মাঝিরা কিছু মাটি কেটে তার ওপর বাঁশের চাটাই তৈরি করে সেতু দিয়ে পারাপারের ব্যাবস্থা করে দেন। এরপর থেকে বাশেঁর চাটাই বেয়ে সেতু দিয়ে চলাচল করছে মানুষ। কবে থেকে সম্পূর্ণ চালু হবে সেতুটি, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
উপজেলা এলজিইডি অফিস অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার পূর্ব মান্দার বাসিন্দাদের পারাপারের সুবিধার্থে আত্রাই নদীর ওপর জোতবাজার খেয়াঘাটে ২১৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল। এতে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৮১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
স্থানীয় কশব গ্রামের বাসিন্দা রুবেল হোসেন, জোতবাজারের রফিকুল ইসলাম, প্রসাদপুর জামিল হোসেনসহ কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, সেতুটি নির্মাণ কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন করতে কয়েকবার সময় বাড়ানোর পরও অসম্পূর্ণ রয়েছে। কাজ না করায় কারণে বাড়ানো সময়ও পার হয়ে গেছে। সেতুটির কাজ সম্পন্ন না করার কারণে চরম সমস্যা হচ্ছে আমাদের। এলজিইডির প্রকৌশলী বারবার জাতীয় নির্বাচনের আগে সেতুটি উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা বললেও বিভিন্ন অজুহাতে সে কথা রাখতে পারেননি তিনি। এ ভোগান্তির শেষ কোথায়? একটি কাজ কেন তারা অসম্পূর্ণ করে রেখেছে এভাবে? নাকি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে টাকা পকেটে ঢোকানোর পায়তারা করা হচ্ছে?’
মান্দা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী সাইদুর রহমান মিঞা বলেন, ‘কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য চেষ্টা চলছে। মাটির অভাবে কাজটি শেষ করা যায়নি। এ ছাড়া ডিজাইনে একটু সমস্যা আছে। আর নরমাল মাটি দিয়ে কাজ করলে সংযোগ সড়ক টিকবে না। তাই ব্লক দিয়ে কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ করার চেষ্টা করছি। চাটাই বেয়ে পারাপারের বিষয়টি আমি শুনেছি। আমরা চেষ্টা করছি কাজটি দ্রুত শেষ করার। কিছুদিনের মধ্যেই সমস্যাটির সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
এ কর্মকতা আরও বলেন, ‘সেতুর বাকি অংশটুকু সম্পন্ন করতে পুনরায় টেন্ডার দেয়া হতে পারে। কাজ সম্পন্ন হলে তো এলাকার মানুষই সুবিধা ভোগ করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো কমতি নেই কাজের। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি কাজটি করার।