বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সিলেটে এসেছেন। তবে তার এই সফর রাজনৈতিক নয় বলে জানিয়েছেন সিলেট বিএনপির নেতারা। তিনি গুমবিষয়ক তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান সালাহউদ্দিন আহমদ। এ সময় সিলেট বিএনপির নেতারা তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হন। বিমানবন্দর থেকে তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল স্থলবন্দরে যান। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, দলীয় কোনো কর্মসূচিতে নয়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগ আমলে গুম হওয়ার ঘটনায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গুম কমিশনের উদ্যোগে করা তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে এসেছেন। এ সময় তিনি ২০১৫ সালে তার গুম হওয়ার ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন।
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, সালাহউদ্দিন আহমদকে চোখ বেঁধে কাদামাটি দিয়ে হাঁটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। একপর্যায়ে তাকে সিঁড়ি বেয়ে কোনো উঁচু জায়গায় উঠিয়ে বাড়িতে রাখা হয়েছিল। সেখানে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা ইংরেজিতে ও হিন্দি ভাষায় কথা বলেছিলেন। সেই বিষয়গুলো তিনি জানিয়েছেন। এসব স্মৃতিচারণার পাশাপাশি তিনি সিলেটের দলীয় নেতা-কর্মী এবং দলের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এর বাইরে দলীয় কোনো কর্মসূচিতে তিনি অংশ নেননি। সন্ধ্যায় বিমানযোগে তার ঢাকার উদ্দেশে ফিরে যাওয়ার কথা আছে।২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহউদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ করেছিলেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমদ। অন্যদিকে তখন বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। তখন সালাহউদ্দিন আহমদ বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন।একই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে সালাহউদ্দিনকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। ভারতীয় পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়। সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে সেখানেই থাকতে হয়।২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তার বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান। দেশবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে চান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন। গত ৩ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দেন সালাহউদ্দিন আহমদ।