দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া শাম্মী আহমেদের প্রার্থিতা বাতিলই থাকছে। এর ফলে এবারের নির্বাচনে লড়তে পারছেন তারা।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ মঙ্গলবার শুনানি এ আদেশ দেয়।
প্রার্থিতা ফিরে পেতে লিভ টু আপিল করেছিলেন শাম্মী। আর সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতার বিষয়ে চেম্বার আদালতের দেয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়েছিল।
দ্বৈত নাগরিকত্ব ইস্যুতে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করেছিল ইসি। এরপরই তিনি হাইকোর্টে আসেন। পরে কয়েক দফা আদালত ঘুরেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়া আটকে গেল তার।
এ ছাড়া দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগে বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পেতে শাম্মী আহমেদও রিট করেছিলেন হাইকোর্ট। এর পর কয়েক দফা আদালতের নির্দেশনা আসে এ নিয়ে। শেষ পর্যন্ত আদেশে আটকে গেলেন তিনিও। এই আসনটিতে স্বতন্ত্র হয়ে লড়বেন বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।
গত ১৮ ডিসেম্বর প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে বরিশাল-৪ আসনের প্রার্থী শাম্মী আহমেদের রিট খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি।
দ্বৈত নাগরিকত্ব ইস্যুতে প্রার্থিতা বাতিল হয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদের। আপিল আবেদন শুনানি করে গত ১৫ ডিসেম্বর এ সিদ্ধান্ত দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
পরে ইসির ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন শাম্মী আহমেদ। শাম্মী আহমেদ এবং একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ পরস্পরের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছিলেন ইসিতে। শুনানি শেষে শাম্মীর প্রার্থিতা বাতিল হলেও বহাল থাকে পঙ্কজ নাথের।
শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও তা গোপন করেছেন বলে অভিযোগ ছিল পঙ্কজ নাথের। আপিলকারীর দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দেয় ইসি। ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের সহায়তায় শাম্মী আহমেদের অস্ট্রেলিয়ার দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে জরুরি ভিত্তিতে ১৪ ডিসেম্বর ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর পর প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ করেছিলেন শাম্মী আহমেদ।
বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছিল আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট।
এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ওই আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের আনা আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার কোর্ট বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দিয়েছিলেন।
সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে আনা আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার কোর্ট হাইকোটের্র আদেশ স্থগিত করে আদেশ দেয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন অন্য প্রার্থী জাহিদ ফারুক।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। কিন্তু দলের মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব ও হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন জাহিদ ফারুক। আর জাহিদ ফারুকের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেন সাদিক আবদুল্লাহ।
শুনানি শেষে ১৫ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন জাহিদ ফারুকের আপিল মঞ্জুর করে। সাদিক আবদুল্লাহর আপিল নামঞ্জুর করে সিদ্ধান্ত দেয় ইসি। ফলে সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিল হয়। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সাদিক আবদুল্লাহ হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্টে রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পান সাদিক আবদুল্লাহ। যা আপিলে স্থগিত হলো।
তফসিল অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ৭ জানুয়ারি হবে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ।