বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেট-৫ ও ৬: শেষ সময়ে এসে সমঝোতার গুঞ্জন

সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীকে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এখানে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আর সিলেট-৫ আসনে ক্ষমতাসীন দলটির সমর্থন পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী।

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনের দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নানা জল্পনা-কল্পনার পর এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান দলটির সাবেক এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। তবে প্রচারের শেষ সময়ে এসে এই আসনে সমঝোতার গুঞ্জন উঠেছে।

আলোচনা শোনা যাচ্ছে, এই আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীকে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে সমঝোতার বলি হতে পারেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

একই ধরনের সমঝোতার গুঞ্জন সিলেটে-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনেও। এই আসনে নৌকার প্রার্থী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী। আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ধর্মভিত্তিক এই সংগঠনের প্রার্থীকে সিলেট-৫ আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।

ইতোমধ্যে দলীয় প্রার্থীকে ফেলে সিলেট-৫ আসনে হুছামুদ্দীন ও সিলেট-৬ আসনে শমসেরের পক্ষে প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী।

সমঝোতার গুঞ্জনের শুরুটা গত বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার যথারীতি নিজ নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। হঠাৎ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তাকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। দুপুর ১২টায় বিমানের ফ্লাইট ধরে ঢাকায় যান তিনি।

সূত্র জানায়, ঢাকায় প্রায় ৪০ মিনিট তাকে নিয়ে বৈঠক করা হয়। এর আগে বুধবার ঢাকায় যান তৃণমূল বিএনপির সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী। তিনিও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে।

এরপর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়, সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের। যদিও ঢাকায় বৈঠকের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শমসের মবিন চৌধুরী। সমঝোতার কথাও অস্বীকার করেছেন তারা।

তবে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দলের উচ্চ পর্যায় থেকে আমাদেরকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষে কাজ করতে বলা হয়েছে। আমরা তার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। তাদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে একজন এমপি হলে আরেকজন মন্ত্রী হতে পারেন।’

নুরুল ইসলাম নাহিদ এবার শুরু থেকেই চাপের মুখে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় উন্নয়নবিমুখতার অভিযোগ রয়েছে। তার আসনে এবার দল থেকেই মনোনয়ন চান আরও অন্তত চার নেতা। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানেও রয়েছেন তিনি। তবে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের মবিন চৌধুরী এ আসনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে সমঝোতার গুঞ্জন শুরু হয়।

সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও ভোটের মাঠে তার তেমন অবস্থান নেই। বরং এ আসনে নাহিদ ও সরওয়ারের মধ্যে লড়াই হতে পারে বলে আলোচনা চলছিলো।

তবে গত দুই/তিন দিনে পাল্টে গেছে চিত্র। বিশেষত নাহিদ ও শমসেরের ঢাকায় ঝটিকা সফরের পর শুরু হয়েছে নতুন করে হিসাব-নিকাশ। দলের প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ থাকার পরও আওয়ামী লীগের একাংশ প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে শমসের মবিনের পক্ষে। বিশেষ করে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শমসেরের পক্ষে ভোটের মাঠে সরব।

শমসের মবিনের নির্বাচনি প্রতীক সোনালি আঁশ-এ পক্ষে প্রচারে সক্রিয় নেতাদের একজন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম। তিনি বলেন, ‘এবার নির্বাচন উন্মুক্ত। দল বা প্রতীক মুখ্য নয়। তাই আমরা এবার যোগ্য ব্যক্তির পক্ষে। আমাদের এলাকা দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন প্রয়োজন। শমসের মবিন একজন যোগ্য প্রার্থী। তাকে ভোট দিয়ে এলাকার উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে।’

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার কথা অস্বীকার করে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার পক্ষে সব দলের নেতাকর্মীরাই কাজ করছেন। আওয়ামী-বিএনপি নির্বিশেষে সবাই আমার সঙ্গে আছেন।’

এদিকে সিলেট-৫ আসনেও মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। ফুলতলীর পীর হিসেবে পরিচিত প্রয়াত আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরীর ছেলে হুছামুদ্দীন চৌধুরী। তাদের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে। এই এলাকায় ফুলতলীর বিশাল প্রভাব রয়েছে।

তাছাড়া ধর্মভিত্তিক এই সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যও দীর্ঘদিনের। ফলে হুছামুদ্দীনকে এ আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে- এমন আলোচনা শুরু থেকেই ছিল। তবে প্রথমদিকে মাঠে এর কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।

হুছামুদ্দিন ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন চৌধুরী দুজনই নিজেদের মতো করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষ সময়ে এসে সমঝোতার গুঞ্জনে পালে বাতাস জোগাচ্ছে হুছামুদ্দীনের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রচার।

গত দু’দিন জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও কাজলসার ইউপির চেয়ারম্যান আশরাফুল আম্বিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে জকিগঞ্জ শহরে মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ‘কেটলি’ প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন।

শনিবার বিকেলে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ নেতাকর্মীদের নিয়ে শহরে মিছিল ও লিফলেট বিতরণ করে কেটলি প্রতীককে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে আশরাফুল আম্বিয়া বলেন, ‘দলীয়ভাবে কোন বাধা না থাকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলীকে বিজয়ী করতে কাজ করছেন। ২০০৮ সাল থেকে হুছামুদ্দীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলেন। সেই দায় শোধ করতেই আমরা তার সঙ্গে আছি।’

জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবীর (ট্রাক)। ফলে ভাগাভাগি হয়ে যেতে পারে নৌকার ভোট। এক্ষেত্রেও সুবিধা পাবেন হুছামুদ্দীন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘শমসের মবিন বা হুছামুদ্দীনকে সমর্থন দেয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। নেতাকর্মী সবাই নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। তবে দলের কেউ অন্য দলের কারও পক্ষে প্রচার চালালে এটা তারা ব্যক্তিগতভাবে করছেন।’

এ বিভাগের আরো খবর