বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাত্রদল নেতা থেকে মাদক সম্রাট

  • আশরাফ বিন ইউছুপ, কক্সবাজার   
  • ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ২২:৩২

• কলজছাত্রের মুখোশ পরে মাদক ব্যবসা, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ • মাসোয়ারা দেয়ায় অভিযানের খবর আগেই পেয়ে যান • স্থল ও আকাশ পথে রাজধানীতে ঢোকে তার ইয়াবার চালান • রোহিঙ্গাদের সমন্বয়ে তৈরি করেছেন সিন্ডিকেট

সাহাব উদ্দিন। বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের কলাতলী ঝিরঝিরি পাড়া এলাকায়। পরিচয় দেন কলেজছাত্র হিসেবে। তবে ছাত্রত্বের মুখোশের আড়ালে তার রয়েছে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য।

সম্প্রতি পাকস্থলিতে ইয়াবা এনে গণনার কিছু ছবি নিউজবাংলার হাতে এসেছে। যাতে দেখা যায়, এক সহযোগীকে নিয়ে ইয়াবা গণনা করছেন সাহাব উদ্দিন। ইয়াবার ছোট ছোট বড়িগুলো যে পাকস্থলিতে বহন করা হয়েছে, তা ছবিতে স্পষ্ট। ঠিক কত হাজার ইয়াবা তিনি বহন করেছেন- ওই চালানে তা নিশ্চিত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, ওই চালানে অন্তত আড়াই হাজার ইয়াবা ছিল। সেগুলো উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনে পাকস্থলিতে করে নিয়ে আসেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, ২০০৮ সাল থেকে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সাহাব উদ্দিন। পাকস্থলিতে ইয়াবা বহনের অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে তার। ফলে সহজেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যান তিনি। যে সকল কর্মকর্তার তার এ অবৈধ ব্যবসা নজরে এসেছে তাদের নিয়মিত মাসোয়ারা দেন সাহাব উদ্দিন। যে কারণে ওইসব কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন না। এ কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তার ইয়াবার সিন্ডিকেট। কক্সবাজার সদর উপজেলায় তার নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে ক্যাম্প-কেন্দ্রিক সিন্ডিকেট, যা এলাকার মানুষের অজানা নয়।

সুত্রটি আরও বলছে, সাহাব উদ্দিন গত তিনবার ছাত্রদলের ঝিলংজা ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নাশকতাসহ নানামুখী কর্মকাণ্ডেও প্রথম সারিতে থাকেন তিনি। একটি ঝুপড়ি ঘর থেকে সাহাব উদ্দিনের সম্পদ এখন পৌঁছেছে ৮টি ভাড়া বাসা, দামী বাইক এবং নিজের বাড়িতে। তার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনের মাদকের আস্তানাগুলো, যেখানে প্রতিদিন পথশিশুদের দিয়ে খুচরা ইয়াবা সরবরাহ করছে তার কর্মীরা। বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় হলেও মাসোয়ারা দেয়ার সুবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেকোনো অভিযানের খবর আগেই পেয়ে যান তিনি। ফলে অভিযানে গিয়েও বারবার খালি হাতে ফিরতে হয় পুলিশের।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে সাহাব উদ্দিনের এলাকার লোকজন অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেন। বলেন, ‘সাহাব উদ্দিনসহ তার পরিবার ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাদের চলাফেরা দেখেই বুঝা যায় তারা মাদক কারবারে জড়িত।’

সাহাব উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া না গেলেও তার মা-বাবার সঙ্গে কথা হয়। তার বাবা মো. আলী বলেন, ‘আপনারা কী জন্য এসেছেন আমরা জানি। আমার ছেলে বাসায় নাই। যা বলার আমাকে বলেন, না হয় চলে যেতে পারেন।’

সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি একজন শিক্ষার্থী। আমি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নই। আমার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ দেখা করার কথা বললে ফোন কেটে বন্ধ করে দেন তিনি।

এ বিষয়ে ঝিলংজা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ইউনূস বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি তদন্ত করে দেখব। সে যদি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে আইনের সগযোগিতা নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (ইন্টেলিজেন্স) দুর্জয় বিশ্বাস বলেন, ‘খবর পেয়ে একাধিকবার তার আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে। এখনো তার বাসার চারপাশ পুলিশ নজরদারিতে রেখেছে। যেকোনো মুহুর্তে গ্রেপ্তার হবে এই মাদক কারবারি।’

নিউজবাংলার কাছে থাকা সাহাব উদ্দিনের মাদক কারবারের ছবিগুলো পুলিশও পেয়েছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজার র‍্যাব-১৫-এর কোম্পানি কমান্ডার অ্যাডিশনাল এসপি আনোয়ারুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

এ বিভাগের আরো খবর