আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ‘মাথাব্যথার কারণ’ হয়ে উঠেছেন দলটির মনোনয়নবঞ্চিতরা। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন এসব নেতা। ব্যতিক্রম কেবল তিন মন্ত্রীর আসনসহ চারটি। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন।
সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা। সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন একজন। তবে তিন মন্ত্রী এমএ মান্নান, ইমরান আহমদ ও শাহাবুদ্দিন আহমদের আসনে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
সিলেট বিভাগের চার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগের মধ্যে কেবল সিলেট-৪, সুনামগঞ্জ-৩, মৌলভীবাজার-১ ও হবিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। এ আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যথাক্রমে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাবুদ্দিন আহমদ এবং হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহির।
এবার দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পরই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার লক্ষ্যে মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নির্দেশনা পেয়ে ক্ষমতাসীন দলটির মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়ে।
দেশের প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এসব ডামি প্রার্থীই ‘যন্ত্রণার কারণ’ হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের। তবে এ ক্ষেত্রে অনেকটা স্বস্তিতে আছেন মান্নান, ইমরান ও শাহাবুদ্দিন। তাদের আসনে নেই কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে। এ আসনে মন্ত্রীসহ সাত প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। বাকি ছয়জন হলেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী তৌফিক আলী মিনার, গণফ্রন্টের মকবুল হোসেন, জাকের পার্টির নজরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুর রহমান খালেদ।
এই আসনে এমএ মান্নান ছাড়াও চারজন আওয়ামী লীগের পক্ষ তেকে চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খায়রুল কবীর রুমেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম। তবে তাদের কেউ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, ‘জগন্নাথপুরের আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করবে। এখানে কেউ দলের বিরুদ্ধে যাবে না।’
মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী-বড়লেখা) আসনেও আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। এ আসনে নৌকার প্রার্থী শাহাব উদ্দিন আহমদ। এর আগে টানা দুবারসহ তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
এ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, কুলাউড়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে তাদের কেউই ডামি প্রার্থী হতে আগ্রহী হননি।
এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘এই দুই উপজেলার মানুষ নানাভাবে অনুরোধ করেছে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে। কিন্তু নৌকার বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার মনমানসিকতা নেই। দলীয় প্রার্থীর জয়ের জন্য কাজ করব।’
রফিকুল ইসলাম সুন্দর বলেন, ‘নৌকা পেলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি ছিল। নেত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য, পরিবেশমন্ত্রীকে নৌকা দিয়েছেন। দলীয় পদধারী বা আওয়ামী লীগের সমর্থক কেউ এ আসনে ডামি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নেই।’
এ আসনে শাহাবুদ্দিন ছাড়াও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির আহমেদ রিয়াজ উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ধর্মভিত্তিক সংগঠন আল ইসলাহ নেতা কাজী ময়নুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (ভান্ডারি)।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন আরও সাতজন। তবে তারা কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। ইমরানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তারা।
এখানে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. ফজলুল হক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাপ মিয়া, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া হেলাল, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম রোমেন এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহজাহান চৌধুরী।
এ বিষয়ে শ্রমিক লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম রোমেন বলেন, ‘আমরা কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হব না। দলের প্রার্থীর বিজয়ে কাজ করব।’
সিলেট বিভাগের তিন মন্ত্রী ‘ডামির যন্ত্রণা’ থেকে রেহাই পেলেও সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে পড়তে হচ্ছে ডামির চ্যালেঞ্জে। তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।