আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ইউটিসি ভবনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে আলাপের শুরুতে নিজের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপির বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, আমি ১৯৭৮ সাল হতে বিএনপির পলিটিকসে যোগদান করি এবং ৩১ বছর বয়সে ১৯৭৯ সালে আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। এরপরে বিরানব্বইতে, ছিয়ান্নব্বইতে, ২০০১-এও হই। ২০০৮-এ আমি করতে পারি নাই। তখন আমার পলিটিক্যাল মামলা-টামলা ছিল। মইন ইউ আহমেদ মামলা দিয়েছে।
‘চৌদ্দতে আমরা নির্বাচনে গেলাম না। আঠারোতে নির্বাচনে গেলাম…ইউ নো বেটার। নির্বাচন করেছি। জিয়াউর রহমান আমার টিচার ছিলেন পাকিস্তান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে। আমাকে স্নেহ করতেন। উনার ডাকে আমি সাড়া দিয়েছি। বেগম জিয়াও আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। খুব ভালো জানেন। তো বেগম জিয়াকে তো আমি এখন তো আমি পলিটিক্যাল হেলম অফ অ্যাফেয়ার্সে (রাজনৈতিক বিষয়ে যুক্ত থাকতে) দেখি না।’
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে শাহজাহান ওমর বলেন, “যারা আছে, আমার তো একটা ফ্রিডম ফাইটার হিসেবে আমার একটা প্রাইড আছে, একটা অহংকার আছে। এর সঙ্গে বর্তমান রাজনীতি টালি করে না। রেজাল্টিংয়ে আমি কয়েকবার বলেছি, আমি রাজনীতি করব না। রিজাইন দেব, এটা করব, সেটা করব। মহাসচিব বারবার আমাকে কোলাকুলি করে, ‘ভাই, করবেন না। আমাদেরকে (ছেড়ে) যাবেন না।”
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আবার আসছে। এখন দেখেন আমার বয়স সেভেন্টি সেভেন। বিএনপি এবার নির্বাচনে যাচ্ছে না। যে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন তারা ইম্পোজ করে, এটা তো কারও পক্ষে হান্ড্রেড পারসেন্ট মানা সম্ভব না। তারপরও আমি ভাবছিলাম যে, মিনিমাম বেগম জিয়াকে মুক্তি দেবে এবং ২৮ তারিখের ঘটনার পরে যে পলিটিক্যাল মামলা সবাইকে দায়ের করেছে…ফুটেজে তো দেখাই যায় কে কী করেছে।
‘আমরা যারা স্টেজে ছিলাম, তারা তো কোনো অপরাধ করিনি বা করতে পারিও না। আপনি এদেরকে কমসে কম মামলা থেকে বাদ দেবেন। তারপরে পুলিশ মার্ডার কেসটেস। একটা স্বাধীন দেশের লোক হয়ে এগুলো তো অপছন্দনীয়। তো কারা করল ব্যাপারটা। এইটাও আমি খুঁজে পাই না।’
বিএনপির রাজনীতি নিয়ে এ নেতা বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি কি এ দেশে ইয়াং ছেলেপেলে কন্ট্রোল করবে না অভিজ্ঞ, মেধা, রাজনৈতিক সচেতন এরা রাজনীতি করবে? এইখানেই আমার ক্ল্যাশ। আমি দেখি, রাজনীতি যারা সচেতন, অভিজ্ঞ, রাজনীতি চর্চা করে, রাজনৈতিক ভাষা জানে, তারা রাজনীতিতে নাই। রাজনীতিতে আছে কী বলে, কচিকাঁচার দল। এটা আমি অ্যাড্রেস করতে পারি না। ৭৭ বছর বয়স হইছে। এবার নির্বাচনে গেল না। আর কবে নির্বাচনে যাবে, গড নোজ।
‘ইন দ্য মিনটাইম, আমাকে অফার দেয়া হলো…আপনি ইলেকশন করেন। আমি বললাম যে, কীভাবে ইলেকশন করব? আমার দল তো করে না। বলে যে, আপনি নিরপেক্ষ নির্বাচন করেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন কী? এটা তো কোনো পক্ষই না। আমার কনস্টিটিউয়েন্সিতে (আসন) সিক্সটি পারসেন্ট বিএনপি। ফোরটি পারসেন্ট আওয়ামী লীগ। তো আমি যদি নিরপেক্ষ যাই, ফোরটি পারসেন্ট আওয়ামী লীগ তো একটা ভোটও দেবে না। আর আমার যে সিক্সটি পারসেন্ট আছে, তারাও তো বলবে যে, এই লোক দলছাড়া নিরপেক্ষভাবে আসছে। তারাও ডেজার্ট (পক্ষত্যাগ) করবে আমাকে। আই উইল লেফট উইথ ২৫ পারসেন্ট, ৩০ পারসেন্ট।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের রাজনীতি করেছি। হি ওয়াজ অ্যা ভেরি গুড ম্যান। ফ্রিডম ফাইটার; বীরোত্তম। তার রাজনীতি করা, সে আমার টিচার ছিল, সাজে। বেগম জিয়ারও রাজনীতি করা সাজে। এরপরে কতগুলি সাজে…আপনারা তো দেশের সুনাগরিক, আপনারা ভালো বোঝেন। তো জিয়ার রাজনীতি ছেড়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে আসা, আমি তো মনে করি, ইট’স আ প্রমোশন। জিয়াউর রহমানের রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ইজ বেটার।
‘এখন তো আমার যে কনস্টিটিউয়েন্সি আছে, আমার বন্ধুবান্ধব, শিষ্য, সাগরেদ লোকজন তো অনেক আছে। তাদেরকে ২০০৬ থেকে ২০২৩, ১৭ বছরে আই কুডন্ট ডো এনিথিং। এরা বিভিন্ন মামলা, হামলা, এটা সেটা, বিভিন্নভাবে ডিপ্রাইভ (বঞ্চিত)। তারা তো ডিপ্রাইভ হয়েছে আমার কারণে। বিকজ আমি তাদেরকে ধরে রাখছি। এদেরকে আমি কী বুঝ দেব? তো ভাবলাম যে, অন্তত কনস্টিটিউয়েন্সির স্বার্থে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে, বিশেষ করে জাতির সার্বভৌমত্বের স্বার্থে আই শুড ডু ইলেকশন। কী করব? যদি মাননীয় নেত্রী আমাকে নৌকা প্রতীক দেন, আই উইল গো ফর দ্যাট। আই হ্যাভ ডিসাইডেড যে, আই সিক ইলেকশন (আমি নির্বাচন করব)। বোট মার্কা।’
ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান শাহজাহান ওমর।
তার উদ্দেশে এক সাংবাদিক বলেন, প্রতীক বরাদ্দ হচ্ছে ১৮ ডিসেম্বর। শেষ পর্যন্ত নৌকা না দিলে তিনি নির্বাচনে থাকবেন কি না।
জবাবে শাহজাহান ওমর বলেন, ‘তাইলে থাকি কেমন করে? আমি নৌকায় নির্বাচন করতে চাই। নৌকায় আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। হিয়ার ইজ অ্যা লেটার (এই যে দেখেন পত্র)।’
আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আই অ্যাম নট অর্ডিনারি ক্যান্ডিডেট (আমি সাধারণ প্রার্থী নই)। এটা (দলে যোগদান) অর্ডিনারি ক্যান্ডিডেটের ব্যাপারে প্রযোজ্য।’