মুন্সীগঞ্জে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচীর সময়ে বেসরকারি প্যাকটজাত গুড়াদুধ খাওয়াতে উদ্ধুদ্ধ করা ও প্রেসক্রিপশন দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সদরের হাটলক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় রোববার ইপিআই টিকা দেয়ার সময় অভিযোগ আসে বিভিন্ন গুড়াদুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা (রিপ্রেজেনটেটিভের) সরাসরি সেখানে উপস্থিত থেকে তাদের কোম্পানির গুড়াদুধ খাওয়ানোর প্রেসক্রিপশন করছেন শিশুর মায়েদের, আর এ কাজে তাদের সহযোগিতা করছেন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা।
এমন তথ্য পেয়ে কেন্দ্রটিতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাস করা হলে একপর্যায়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় বেসরকারি কোম্পানির এক রিপ্রেজেনটেটিভ। ঘটনাটি ঘটে দুপুর ১২টার দিকে।
টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, হাটলক্ষ্মীগঞ্জ বেসরকারি জুনিয়র স্কুলে জন্ম থেকে ১৫মাস বয়সী শিশুদের ইপিআই টিকা দেয়ার কার্যক্রম চলছে যেখানে শিশুদের নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন স্থানীয় মায়েরা।
টিকা দেয়ায় নিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে বসেই শিশুর মায়েদেরকে ‘বায়োমিল’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাকেট দুধ খাওয়াতে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন গিয়াসউদ্দিন নামের এক রিপ্রেজেনটিভ। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেই তিনি প্রথমে নিজেকে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।
তবে ‘শিশুদের মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই’ এমন কথা বিভিন্ন সময় সরকারিভাবে প্রচার করা হওয়ার পরেও কেন বেসরকারি গুড়াদুধ খাওয়ানোর প্রেসক্রিপশন দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্ন করতেই সেই বেসরকারি কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভের হাতে থাকা প্রেসক্রিপশনের কাগজ পকেটে ভরে দ্রুত বের হয়ে যান রুম থেকে। কিছুটা এগিয়ে দৌড়ে কেন্দ্রের স্থান ত্যাগ করেন।
শিশুকে টিকা দিতে আশা নারী সোহাগী বলেন, ‘আমার শিশুকে টিকার জন্য এসেছিলাম। টিকার দেয়ার পর আমাকে বললো গুড়া দুধ খাওয়াতে। আমিতো ভাবছিলাম ওনি ডাক্তার। পরে আপনারা আসার পর চলে গেলেন।’
টিকা দিতে আসা আরেক নারী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের ডাক্তার বলেছিল মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে, এখানে সবাইকে বলা হচ্ছিলো গুড়া দুধের কথা। পৌরসভা থেকে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে ওই লোক বসা ছিলো। স্বাস্থ্যকর্মীরা সহযোগিতা না করলে সে তো বসতে পারতো না।’
দোষ স্বীকার করে বায়োমিল কোম্পানির জেলা মার্কেটিং অফিসার রাজীব আহমেদ বলেন, ‘মাতৃদুগ্ধের বিষয়ে অনেক আইন রয়েছে। আমাদের ওই প্রতিনিধি টিকাদান কর্মসূচিতে যাওয়া ঠিক হয়নি।’
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জে পৌরসভার নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা লিনা শাহা বলেন, ‘এভাবে গুড়াদুধ খাওয়ার পরামর্শের এখতিয়ার তাদের নেই। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পৌর নির্বাহী অফিসারকে জানাবো।’
ঘটনায় পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের যোগসাজোশের বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। বিষয়টি আমি জেনেছি। তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে রিপ্রেজেনটেটিভকে সরিয়ে দিতে। তাদের যদি ক্যাম্পেইন করার দরকার হয় আলাদা করবে। আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবে না। পরবর্তীতে এমন ঘটনা শুনলে স্বাস্থ্যকর্মীদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘মাতৃদুগ্ধের বিকল্প কোনো গুড়াদুধ শিশুদের জন্য আমরা অনুমতি ও পরামর্শ দেইনা। কোনো কোম্পানির লোকজন যদি এটা করে থাকে তাহলে অবৈধ কাজ করেছে। তবে পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা সরাসরি সিভিল সার্জন অফিস থেকে মনিটরিং হয় না। তাহলে তাদের তলব করা যেত। তারপরও বিষয়টি আমি পৌর মেয়রকে জানাবো।’