বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আর ‘মিধিলি’ নামের এই ঘূর্ণিঝড় শুক্রবার দুপুরের দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি রাতের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। বর্তমানে যে গতিতে গভীর নিম্নচাপটি এগিয়ে আসছে, তাতে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে এই গতি পরিবর্তন হতে পারে। এর প্রভাবে শুক্রবার ঢাকায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। তবে এটি দমকা হাওয়া আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গভীর নিম্নচাপের কেন্দ্র ও আশপাশে সাগর উত্তাল থাকায় নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার ৬ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর এবং ঘণীভূত হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপটির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ শুক্রবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এটি দেশের উপকূলীয় ১১টি জেলায় আঘাত হানার শঙ্কা রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে মঙ্গলবার সৃষ্ট লঘুচাপটি বুধবার নিম্নচাপে পরিণত হয়। বৃহস্পতিবার এটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। আর এটি রাত ১২টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১১টি জেলায় এই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। জেলাগুলো হলো- সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম।
তিনি বলেন, গতি বিশ্লেষণ করলে বলা যেতে পারে, ঘূর্ণিঝড় হিসেবে এটি শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানবে। তবে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা অনেকটাই কম।