প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সব গুণী মানুষকে আক্রমণ করছেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে আক্রমণ করেছিলেন। এখন ড. ইউনূসকে আক্রমণ করছেন। তিনি দেশের ছেলে, নোবেল পুরস্কার পেয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনার মনে কোথায় যেন ঈর্ষা কাজ করছে ।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শনিবার দুপুরে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী’ উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘সরকার নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করেছে। কই, তারা তো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আসলে এরা ক্ষুধার সরকার, দুর্ভিক্ষের সরকার। মানুষ মরলো নাকি বাঁচলো- সেদিকে তাদের দৃষ্টি নেই। এই সরকার নীল নকশা করে ক্ষমতায় আছে। যে কারণে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে এখনও কারান্তরীণ রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের দিয়ে দাস-শ্রমিক তৈরি করছেন। বিএনপির নেতা-কর্মীরা চিকিৎসা পান না। অনেকেই কারাগারে মারা গেছেন। এবার তার টার্গেট ওপরের দিকে। মূলত তিনি নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে চান। কিন্তু এবার গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছে, তারা রাস্তায় নেমেছে। সব পেটোয়াকে রুখে দেবে।’
প্রয়াত বিএনপি নেতাদের স্মরণ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আমাদের কীর্তিমান মানুষদের একজন। কিন্তু আমরা তাদের মনে রাখি না। অথচ এসব মানুষ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। ছাত্র আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষ। তাকে আমাদের বেশি বেশি মনে করতে হবে। একইভাবে মওদুদ আহমদ, আব্দুস সালাম তালুকদার, কেএম ওবায়দুর রহমান- তাদেরও মনে রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আজ এই সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস হয়। এটা তো প্রধানমন্ত্রী ও আবদুর রাজ্জাকদের জবাব দিতে হবে। আমাদের ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম কোথায়?’
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার দুই বছরে কারাদণ্ড পেয়েছেন মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান।
এই সাজার বিষয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজ আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বললেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে যায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কেউ বললে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় নির্যাতন-নিপীড়ন। আদিলুর রহমান খান একজন ভদ্রলোক ও আইনজীবী। তিনি এই সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন বিধায় তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে একটা জরিপ করতেন। তিনি সাধারণ মানুষের মাঝে জরিপ করে দেখতেন যে, তিনি খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আদিলুর রহমান খানকে যে সাজা দিয়েছেন তা জনগণ সমর্থন করে কি না।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহাজাদা মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ডা. জাহেদুল কবির জাহিদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন প্রমুখ।
পরে মরহুম শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন ওলামা দলের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার।