সরকার নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে হয়রানি করছে না বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘সরকার ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করেনি, বরং তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা ও কর ফাঁকির অভিযোগে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন।’
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। খবর ইউএনবির।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রফেসর ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি অনেকের কাছে বোধহয় স্পষ্ট নয়। অনেকেই মনে করছেন তাকে রাজনৈতিক কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা যতদূর জানি, তার বিরুদ্ধে মামলা সরকার করেনি। আমরা তাকে শ্রদ্ধা করি। তিনি দেশের জন্য সম্মান বয়ে এনেছেন।’
তিনি বলেন, ‘তার নামে দুইটা মামলা আছে। মামলার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভালো বলতে পারবে। তবে আমরা যতদূর জানি, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী উনার কোম্পানি যে লাভ করেছে, তার ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দিতে হয়। শুনেছি, উনার কোম্পানি শ্রমিকদের ঠকিয়েছে। লাভের অংশ তাদের দেয়নি। এটার সত্যতা কোর্টে প্রমাণ হবে। কোর্টের বিষয় আমার বলা ঠিক হবে না।’
মোমেন বলেন, ‘উনার নামে দ্বিতীয় মামলাটি হলো, উনার কোম্পানি অনেক লাভ করেছে, কিন্তু কর দেয়নি। আর লাভ করলে দুনিয়ার সব দেশের নিয়ম হলো কর দেয়া। উনার কোম্পানি কর ফাঁকি দিয়েছে। যেহেতু তিনি কোম্পানির বস, তাই উনার নামেই মামলা হয়েছে। দুনিয়ার সব দেশেই কর ফাঁকি দেয়া হলে বড় ধরনের মামলা হয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কোনো হয়রানিমূলক কাজ সরকার করেনি। দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, কর ফাঁকি দেয়া এবং দরিদ্র শ্রমিকদের লাভের অংশ না দিয়ে প্রতারণা করার কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর উনার বিষয়ে যারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন তারা হয়তো বিষয়গুলো জানেন না। তারা ভাবছেন, উনাকে হয়তো রাজনৈতিক কারণে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি আশা করব, যারা চিঠি লিখেছেন তারা বিষয়টি আরও জানবেন। তারা যদি আমাদের কাছে জানতে চান, আমরা অবশ্যই তাদের বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলব।’
মোমেন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ড. ইউনূসের পক্ষে যারা চিঠি লিখেছেন, তাদের জানার সঙ্গে প্রকৃত ঘটনার ফাঁক রয়েছে।’
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) এস এম আরিফুজ্জামান ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে নোবেল বিজয়ী ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা করেন। গত ৬ জুন মামলায় অধ্যাপক ইউনূসসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২২ আগস্ট মামলার শুনানি শুরু হয়।
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি ১০০ জনের বেশি নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ টিরও বেশি বিশ্ব নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি সম্বোধন করা চিঠিতে নোবেল বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের নেতাদের স্বাক্ষর রয়েছে।