টাঙ্গাইলের সখীপুরের ছাত্রলীগ নেতা সোহেল খান ফাহাদের স্ত্রী ও সন্তানের অধিকার চেয়েছেন এক নারী। অধিকার আদায়ের দাবিতে জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি। তার দাবি, প্রেম করে ফাহাদ প্রায় তিন বছর আগে তাকে বিয়ে করেছেন। সম্প্রতি স্ত্রী ও সন্তানের অধিকার আদায়ের জন্য ওই নারী ফাহাদের বাসায় গেলে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে তিনি সখীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
পৌর শহরের হুমায়ন খানের ছেলে সোহেল খান ফাহাদ সখীপুর শহর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
ওই নারী প্রায় চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওই ছাত্রলীগ নেতা নানা টালবাহানা শুরু করেছেন অভিযোগ তার।
ওই নারী জানান, প্রায় চার বছর আগে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নার্সের চাকরি করতেন তিনি। ফাহাদ ওই সময় তার কোনো এক আত্মীয়কে সিজার করাতে ওই ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখান থেকে ফাহাদের সঙ্গে পরিচয় এবং এক পর্যায়ের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি তারা আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ফাহাদ সরকারি চাকরি নিবে- তাই বিষয়টি কাউকে না জানাতে তাকে অনুরোধ করেন।
তিনি আরও জানান, বিয়ের পর তারা মির্জাপুরের গোড়াই ও হাটুভাঙ্গা এলাকায় খবির উদ্দিন ও আলম সিকদারের বাসায় ভাড়া থেকেছেন। ফাহাদ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে অস্থায়ী চুক্তিতে চাকরি করতেন। দুই মাস আগে তারা খবির উদ্দিনের বাসা ছেড়ে দিলে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। বিষয়টি ফাহাদের মাকে অবগত করলে তিনি ওই নারীর গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলতে বলেন। সন্তান নষ্ট না করায় ফাহাদের মা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। পরবর্তীতে ফাহাদও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। গত শনিবার (২৬ আগস্ট) ফাহাদের বাড়িতে গেলে ওই নারীকে বেধড়ক মারধর করেন ফাহাদের মা ও তার পরিবারের সদস্যরা। পরে তিনি সখীপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়াও বিষয়টি বিভিন্ন জনপ্রনিধিকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ‘আদালতে বিয়ের সময় ফাহাদ তার নাম পুরোপুরি লেখেননি। এ ছাড়া তার বাবার নাম ভুল দিয়েছেন। পরবর্তীতে কাগজটি ঠিক করলেও তিনি আর আমার কাছে তা দেননি। আমি সন্তান ও স্ত্রীর অধিকার আদায়ের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। ফাহাদ আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। আমি আমার অধিকার চাই।’
হাটুভাঙা এলাকার বাড়ির মালিক খবির উদ্দিন বলেন, ‘তারা প্রায় পাঁচ মাস আমার বাসায় ভাড়া ছিলেন। দুই মাস আগে তারা চলে যান। এরপর থেকে আমার সঙ্গে তাদের আর কোনো যোগাযোগ নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সোহেল খান ফাহাদ বলেন, ‘আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর ওই তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিয়ের কাগজটা জাল। সেখানে আমার নাম, বাবার নাম ও জন্ম তারিখ কোনোটাই ঠিক নেই।’
ওই নারীর বিরুদ্ধে একাধিক বিয়েসহ নানা রকমের আপত্তিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আছে বলে দাবি করেন তিনি।
সখীপুরের বড়চওনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শেখ মোহাম্মদ লিটন মিয়া বলেন, ‘ঘটনা সত্য। মেয়েটি খুবই অসহায়। আমি মেয়েটির ও তার সন্তানের অধিকার আদায়ের দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে সখীপুর থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’