খুলনা নগরের গল্লামারীতে ময়ূর নদের ওপর দুটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
১০ মে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়াও শেষ করে ফেলেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
বর্তমানে গল্লামারী এলাকায় দুটি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে একটি সেতুর বয়স মাত্র ৮ বছর। অন্যটি পাকিস্তান আমলে তৈরি। নতুন যে দুটি সেতু নির্মাণ করা হবে, তা হবে বিদ্যমান দুটি সেতুর স্থানেই।
সওজের তথ্য থেকে জানা যায়, নতুন যে দুটি সেতু নির্মাণ করা হবে তাতে ময়ূর নদের মধ্যে কোনো পিলার বসবে না। ওই দুটি হবে ঝুলন্ত আর্চ ব্রিজ। বর্তমানে যে দুটি সেতু রয়েছে, তা ভেঙে সেখানেই নতুন দুটি সেতু করা হবে। ১৫ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন দুটি সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৭৪ মিটার ও প্রস্থ ২২ মিটার।
২০১৩ সালে গল্লামারী এলাকায় যখন নতুন করে সেতু করা হয়, তখন তা নির্মাণের জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অনুমোদন নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
উঁচু না করে নদের মাঝ বরাবর আড়াআড়িভাবে তা তৈরি করা হয়েছে। এতে সেতুর নিচ দিয়ে নৌকার মতো ছোট নৌযানও চলাচল করতে পারে না। এ কারণে নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই তা ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়ে আসছিল খুলনা সিটি করপোরেশন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।
নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ৮ বছরের মাথায়ই সেতুটি ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়ায় সরকারের গচ্চা যাচ্ছে প্রায় ৭ কোটি টাকা।
খুলনার নাগরিক সমাজের নেতারা বলছেন, ‘সরকার টাকা পায় সাধারণ জনগণ থেকে। সেই টাকা খরচ করতে হবে পরিকল্পিতভাবে। কিন্তু গল্লামারী সেতুটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় সরকারের টাকার অপচয় হয়েছে।’
ওই সেতু নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি দাবি করেন তারা।
সড়ক বিভাগ জানায়, গল্লামারী এলাকার পুরনো সেতুটি নির্মাণ করা হয় পাকিস্তান আমলে। সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় তার পাশে আরেকটি সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৩ সালে। সেতুর কাজ শেষ হয় ২০১৫ সালের শেষের দিকে। পিসি গার্ডার পদ্ধতির সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পাশে থাকা পুরনো সেতু দিয়ে এখনও যানবাহন চলাচল করে।
খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জানা গেছে, ওই সেতু ভেঙে ফেলে বিআইডব্লিউটিএর পরামর্শ অনুযায়ী ১৫ ফুট উচ্চতার দুটি সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে নৌযান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটবে না। চার লেনবিশিষ্ট (একেকটি দুই লেন করে) ওই দুই সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি টাকা।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘এত নিচু করে কোনো নদীর ওপর সেতু তৈরি করা হয়, তা আগে কখনো দেখিনি। খুলনাবাসীর সব ধরনের আপত্তি উপেক্ষা করে একপ্রকার জোর করে সেতুটি নির্মাণ করেছে সওজ। এতে জনগণ ও সরকারের টাকার অপচয় হয়েছে। এই দায় এখন কে নেবে?’