নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ নেয়াকে কেন্দ্র করে ফের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন।
উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্রের অফিস ঘাট, নবকুশোল ও মেম্বার রোডসহ তিনটি গলিতে শুক্রবার রাত দেড়টা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন ২৮ বছর বয়সী আলমগীর হোসেন, ৩০ বছর বয়সী হৃদয় খান, ৩০ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেন ও ১৭ বছর বয়সী মো. ইলিয়াছ। তারা সকলেই চনপাড়ার বাসিন্দা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘাতের শুরু হয় নবকুশার রোডের আলামিন মডেল একাডেমির ভেতর থেকে। সেখানে ইউপি সদস্য পদে সদ্য জয়ী মাদক কারবারি শমসের এবং শাহাবুদ্দিনসহ তার লোকজন গান বাজনা করছিলেন। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে আরেক মাদক কারবারি জয়নাল ও তার লোকজন সেখানে যান। এরপর আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ নেয়াকে কেন্দ্র করে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
গলিতে গলিতে গোলাগুলি আর ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ দোকানপাট ভাঙচুর চালানো হয়। হেলমেট ও লাইফ জ্যাকেট পড়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংর্ঘষে গুলিবিদ্ধসহ আহত হন অন্তত ১৪ জন।
রূপগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক আতাউর রহমান জানান, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত জয়নাল ও শমসের গ্রুপের লোকজনের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। পুলিশ চনপাড়ায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, চনপাড়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ চারজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ বিষয়ে জানতে চনপাড়ার মাদক কারবারি জয়নালের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার শ্যালক মাহমুদ ফোন ধরেন।
তিনি বলেন, ‘চনপাড়ায় মেম্বার পদে জয়ী শমসের ও শাহাবুদ্দিনসহ তাদের সহযোগী অনিক শটগান দিয়ে গুলি করেছেন। তাদের গুলিতে আহত হয়েছে চারজন। শটগানের গুলিতে ইসমাইলের পা আলাদা হয়ে গেছে।’
জয়নাল কোনো গুলি করেননি বলে দাবি করেন তার শ্যালক। জয়নাল ঘুমিয়ে আছেন বলে জানান তিনি।
অপরদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য শমসেরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার শ্যালিকা পরিচয়ে একজন ফোন রিসিভ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী মোবাইল ফোনে বলেন, ‘রাতে অনুষ্ঠান চলছিল। ওই সময় জয়নালের লোকজন এসে আগে হামলা করে। তারা গুলিও করেছে। শমসের এখন এলাকায় নেই। তার ফোন বাড়িতে রেখে গেছেন।’
এদিকে স্থানীয়রা জানান, শমসের ও জয়নালের মধ্যে চনপাড়ার আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবারের দখল নিয়ে চলতি বছরের অন্তত ত্রিশ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার শমসের মেম্বার হিসেবে শপদ গ্রহণ করেন। পরে চনপাড়ায় ফিরে তার লোকজন নিয়ে অলিতে গলিতে গিয়ে রং খেলেন। এসময় পরাজিত প্রার্থী জয়নালও তার লোকজনদের একত্রিত করেন। রাতে একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় তারা।