দিনভর বৃষ্টি আর যানজট উপেক্ষা করেই রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদর ঘাটে ভিড় করেছেন দক্ষিণাঞ্চলগামী নৌযাত্রীরা। ভোগান্তি হলেও নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে সদরঘাটে যাত্রীর উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিগত কয়েকদিনের তুলনায় কম যাত্রী থাকলেও ঈদের আগের দিন লঞ্চগুলো কানায় কানায় ভরেই গন্তব্যে ছেড়েছে।
বুধবার সদরঘাট টার্মিনাল এলাকা ও পন্টুন ঘুরে দেখা যায়, অনেকটা কাকভেজা হয়েই টার্মিনালে আসছেন যাত্রীরা। পন্টুনে যাত্রীর অপেক্ষায় আছে লঞ্চ। যাত্রীর জন্য হাঁক-ডাক করছেন লঞ্চ স্টাফরা। কানায় কানায় ভরে ওঠামাত্রই ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রুটের লঞ্চগুলো।
বৃষ্টি ও যানজটে ভোগান্তি চরমে ওঠা যাত্রীরা জানান, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট রুটে যানজটে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে হেঁটে ঘাটে আসতে হয়েছে তাদের। বৃষ্টির মধ্যে পরিবার ও ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে হেঁটে আসা কষ্ট আরও বাড়িয়েছে তাদের৷ বিশেষ করে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের ভোগান্তি ছিলো সবচেয়ে বেশি। তবে ঘাটে পর্যাপ্ত লঞ্চ থাকায়, এসেই লঞ্চ পেয়েছেন ডেকের যাত্রীরা। কেবিনও ফাঁকা ছিলো অধিকাংশ লঞ্চের। তাই যারা অগ্রিম কেবিন বুকিং করেননি, কেবিন পেয়ে খুশি তারাও।
যাত্রাবাড়ী থেকে আসা পটুয়াখালীগামী যাত্রী শাকিল হোসেন বলেন, ‘রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে হাজার হাজার মানুষ হেঁটে এসেছে। এর মধ্যে বৃষ্টি। বাচ্চা, ব্যাগ নিয়ে হেঁটে আসা কি যে ভোগান্তির কাজ, এটা দায়িত্বশীলরা বোঝার চেষ্টা করেন না। প্রতিবছর ঈদের সময় একই সমস্যা। তারা সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তাটা বন্ধ করলে ভালো হতো।’
ভোলাগামী যাত্রী টিপু মুন্সি বলেন, ‘গুলিস্তান থেকে সদরঘাট আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। তার ওপর হেঁটে আসা লাগছে। বাচ্চা-পরিবার নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে আসতে যথেষ্ট ভোগান্তি হয়েছে। তবে ঘাটে এসে কেবিন পেয়েছি। তাই ভালো লাগছে। পরিবারের সাথে ঈদ করবো, এই আনন্দের কাছে ভোগান্তি তুচ্ছ।’
বিগত কয়েকদিনের তুলনায় বুধবার সদরঘাটে যাত্রী সংখ্যা ছিলো কম। শেষ কর্মদিবস ও ঈদের ছুটির প্রথম দিনই দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ যাত্রী চলে গেছে বলে জানান লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। তবে বৃষ্টি না হলে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হতো বলে ধারণা তাদের।
পারাবত-৬ লঞ্চের টিকিট বিক্রেতা শাহ রকিবুল হাসান বলেন, ‘যাত্রী যা আসছে তা বলা চলে অনেক। এমনিতেই সাধারণ সময়ে যাত্রী হয় না। ঈদের সময়টাতেই শুধু আমাদের ব্যবসা হয়। লঞ্চ তো ভরা মাত্রই ছেড়ে দিচ্ছে। মানুষ যা যাওয়ার সবাই গত দুদিনে চলে গেছে। আজ বৃষ্টি না হলে আরও মানুষ হতো।’
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে গত দুই-তিনদিনের তুলনায় যাত্রী কম আজ (বুধবার)। তবুও আমাদের পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত আছে। যত যাত্রীই আসুক আমরা লঞ্চ দিতে পারবো।’
এদিকে সাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংকেত না বাড়ানো পর্যন্ত লঞ্চ চলবে। আর লঞ্চ মাস্টারদের সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি লঞ্চগুলোতে পর্যাপ্ত বয়া, জ্যাকেট ও অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিআইডব্লিওটিএ-র যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, ‘সংকেত না বাড়ানো পর্যন্ত লঞ্চ ছাড়বে। এখন তো তেমন পরিবেশ নেই লঞ্চ বন্ধ করার মতো। আশা করছি ঈদের দিনও কোনো সমস্যা হবে না। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
‘মাস্টার ও লঞ্চমালিক সমিতিকে অবহিত করা হয়েছে সতর্কতার বিষয়ে। আমাদের মনিটরিং টিম ঘাটে অবস্থান করছে। কোনো লঞ্চ যেন অতিরিক্ত যাত্রী না নেয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।’
তিনি জানান, বৃষ্টি হওয়ায় যাত্রী গত দু’দিনের তুলনায় কম। মঙ্গলবার ১৩৩টি লঞ্চ বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে। বুধবার সর্বমোট লঞ্চ সংখ্যা ১০০ থেকে ১১০টা হতে পারে।