বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মা সেতুর এক বছর, দক্ষিণের ভোগান্তিহীন যাত্রা

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পুলিশ দিন-রাত পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় কাজ করছে এবং জনবল বাড়ানো হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি পদ্মাসেতু কেন্দ্রিক নিরাপত্তায়। দিনের চাইতে রাতে পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে।’

এক বছর আগেও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রা মানেই ছিল পদ্মা পারাপারে ফেরিঘাটের ভোগান্তি, সবচেয়ে বেশি বিপত্তি দেখা দিত রাত নামলে। তবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে সব কিছু। উদ্বোধনের বর্ষপূর্তির লগ্নে যাতায়াতকারীরা বলছেন, শুধু দিনের ভোগান্তি লাঘবই নয়, পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে রাতের যাতায়াতকে করেছে ভয়হীন। দিনে-রাতে এখন সমান গতিতে বাধাহীন ছুটে চলায় উচ্ছ্বাস সবার।

রাজধানী ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গে যাত্রা মানেই ছিল নদী পারাপার আর ফেরিঘাটের সীমাহীন ভোগান্তি। উত্তাল ঢেউ, বৈরি আবহাওয়াসহ নানা কারণে ফেরি বন্ধে হাজারো যাত্রীকে বিপাকে পড়তে হত প্রতিনিয়ত। সবচেয়ে বড় বিপত্তি ছিল রাত নামলে, পারাপারের অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকা যাত্রীদের রাত কাটতো ভয় আর নানা শঙ্কা নিয়ে। কমে আসতো যাতায়াতের গতি। তবে সেসব এখন পুরানো অতীত। পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে দৃশ্যপট।

ঢাকা থেকে শরীয়তপুরগামী মোটরসাইকেল আরোহী জীবন সরকার বলেন, ‘ঢাকায় বড় ভাইয়ের ব্যবসায় সহযোগী হিসাবে কাজ করি। বিভিন্ন প্রয়োজনেই সপ্তাহে দু-একবার বাড়িতে যেতে হয়। সেতু দিয়ে সহজেই যখন-তখন এখন যেতে পারি। আমরা চেষ্টা করি নিয়ম মেনেই নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য। সবাই সবাইকে উৎসাহ দেই নিয়ম মানার জন্য। যেন আর কখনও সেতুতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ না হয়।’

একই কথা জানান আরেক আরোহী মো. আশরাফ। তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেল চলতে দেয়ায় এখন নিয়মিত ঢাকায় যাতায়াত করি। ছোট প্রয়োজনেও যাতায়াত করি, কারণ এখন ভোগান্তি নেই। আর মোটরসাইকেল চলায় সাশ্রয়ী, যাতায়াতও সহজ হয়েছে।

একই কথা জানান আরও বেশ কয়েকজন। তাদের মতে এখনও যারা নিয়ম অমান্য করে মোটরসাইকেল চালায় তাদের সতর্ক হওয়া উচিত।

ঢাকায় পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সানজানা আক্তার রাত্রি বলেন, ‘আমি মাদারীপুরের শিবচরে যাব। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে তাই আগেভাগেই যাচ্ছি। পদ্মা সেতু হওয়ার আগে এখানেই ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো শিমুলিয়া ঘাটে এলাকায়। তারপর লঞ্চ ফেরি অথবা স্পিডবোটে পাড়ি দিতে গুণতে হত অতিরিক্ত টাকা। এখন দুই ঘণ্টার মধ্যেই যেতে পারছি বাড়ি, ভোগান্তি নেই। পদ্মা সেতু আমাদের পদ্মার ওপারের মানুষের জন্য আশীর্বাদ।’

ট্রাকচালক মজিদ এসেছে ফরিদপুর থেকে, যাবে ঢাকায়। তিনি বলেন, ‘গরু নিয়ে আসছি বারোটা, গরু ঢাকায় গরুর হাটে নিয়া যামু। প্রতি বছরই গরু নিয়ে আসি। আগে তো বাংলাবাজার ঘাটে আইসা ট্রাকে গরু লইয়া অপেক্ষা করতে হতো ফেরির জন্য। এখন তো পদ্মা সেতু দিয়া সরাসরি চলে আসছি, গরু নামায় দিয়া আবার গরু আনতে যাব। কোথাও অপেক্ষা করতে হইবো এটাই তো মাথায় চিন্তা আসে না।’

বাসমালিক রোমান মিয়া বলেন, ‘আগে ঢাকা মাওয়া রোডে ঢাকা মাওয়া ঘাট পর্যন্ত বাস চলাচল করত। যাত্রীদের ঢাকা থেকে এসে ঘাটালে অপেক্ষা করতে হতো লঞ্চ-ফেরি জন্য। আমাদেরও অনেক সময় খালি গাড়ি ঢাকা যাবে অপেক্ষা করতে হতো ঘাট এলাকায়। তবে এখন ঢাকা-কুয়াকাটা-ঢাকা-বরিশাল রোডে আমাদের গাড়ি চলে। কোথাও অপেক্ষা করতে হয় না। যার জন্য অন টাইমে গাড়ি যেতে-আসতে পারছে। দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের জন্য পদ্মা সেতু আশীর্বাদ।’

পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পুলিশ দিন-রাত পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় কাজ করছে এবং জনবল বাড়ানো হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি পদ্মাসেতু কেন্দ্রিক নিরাপত্তায়। দিনের চাইতে রাতে পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে।’

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক (পদ্মা সেতু সাইট অফিস) মো. আমিরুল হায়দার চৌধুরী জানান, যানবাহনের শৃঙ্খলা আর যাত্রীদের নিরাপত্তায় রাতে বিশেষ তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুর্ঘটনা এড়াতে চালকদের সতর্ক থাকার আহ্বান তাদের।

এদিকে দ্রুতই টোল প্লাজায় চালু করা হবে অটোমেটিক টোল সিস্টেম (ওটিসি)। প্রথম বছরে পদ্মা সেতু দৈনিক টোল আদায় হয়েছে গড়ে ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি। বছর ঘুরে শেষ প্রান্তে এসে সর্বমোট প্রায় ৮০০ কোটি টাকার টোল আদায় করা হয়েছে ।

এ বিভাগের আরো খবর