কোমল পানীয়র বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করে সাড়া ফেলেছেন শেরপুরের কবিরাজ সমশেদ আলী ওরফে ফক্কা। তার এ বাড়ি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন গ্রামসহ আশপাশের এলাকার লোকজন। কেউ কেউ সেলফিতে ধারণ করছেন মুহূর্ত।
কোমল পানীয় পানের পর ফেলা দেয়া প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে শেরপুর সদরের বাজিতখিলা ইউনিয়নের সুলতানপুর উত্তরপাড়া এলাকার ফক্কা কবিরাজের বাড়িটি।
সেই বাড়িতে বুধবার বিকেলে গিয়ে ভিড় দেখা যায় স্থানীয় ও আশপাশের লোকজনের। অনেককেই সেলফি তুলতে দেখা যায়।
কথা হয় বোতলবাড়ির মালিক ফক্কা কবিরাজের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসব বোতল পরিবেশ দূষণ করে। আর আমি মোবাইলে দেখছি ইটের বদলে বোতল দিয়ে বাড়ি করা যায়। এতে খরচও অনেক কম। তাই আমার ইচ্ছা হলো বোতলের বাড়ি বানাব।’
যেভাবে বাড়ি নির্মাণ
ফক্কা কবিরাজ বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব বাড়িটি তৈরি করতে ভাঙাড়ির দোকান থেকে প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের ৯ মণ বোতল সংগ্রহ করি। ১ মণ প্লাস্টিকের বোতলের দাম পড়েছে ১ হাজার টাকা। এতে ৯ মণ বোতল ৯ হাজার টাকা পড়েছে। এরপর সেইসব বোতলে শ্রমিক দিয়ে বালু ও মাটি ভরি। পরে বালু ভর্তি বোতলগুলো সিমেন্টের সাহায্যে ধীরে ধীরে লাগিয়ে নির্মাণ করা হয় বাড়িটি।
‘এই বাড়িটি তৈরি করতে আমার সময় লাগে দুই মাস। ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি করলে খরচ হতো প্রায় ৪ লাখ টাকা, কিন্তু পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে এই বাড়িটি খরচ হয়েছে অনেক কম। এতে সব মিলিয়ে আমার খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি বাড়িটিও মজবুত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাড়িটি দেখতে অনেকেই আসতেছে। আর এই বাড়ি দেখে পাশের উপজেলা ঝিনাইগাতীর পাইকুড়ায় আরও দুইজনের বাড়ির কাজ শুরু হয়েছে।’
‘বোতলবাড়ি দিয়ে মামা ভাইরাল হইয়া গেল’
স্বজনরা জানান, ফক্কা কবিরাজের বাড়িটি নিয়ে শুরুতে আশপাশের মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও এখন তারা গর্বিত।
সমশেদ আলীর ভাই জমশেদ আলী বলেন, ‘আমার ভাই যহন ঘরটা দেয়া শুরু করে, তহন মানুষে মেলা টিটকিরি পারছে। ওই সময় বলছে সমশেদ পাগলা হইছে। বোতল দিয়া কোনো সময় ঘর হব? এহন ঘর তৈরি করার পর দূরদুরান্তের মানুষ আইতাছে, দেখতাছে। এর মধ্যে দুইজন আইসা এনো থাইক্কা মিস্ত্রি নিয়া বোতলঘরের কাম শুরু করছে।’
কবিরাজের ভাগ্নে জসিম বলেন, ‘আমার মামা বোতল কিন্না ঘরডা দিছে; খুব সুন্দর হইছে। আর মামার বাড়িত তো এহন মেলা আইতাছে ঘর দেখবার। বোতলবাড়ি দিয়া মামা তো পুরাই ভাইরাল হইয়া গেল।’
‘বাড়িটা সুন্দর হইছে, সেলফি তুলে রাখলাম’
বোতলবাড়ি দেখতে প্রতিদিনই আশপাশের মানুষ আসছেন কবিরাজের ভিটায়। কেউ কেউ মোবাইলে সেলফি তুলে রাখছেন।
শেরপুর পৌরসভার উত্তর গৌরীপুর থেকে আসা আবদুল আজিজ বলেন, ‘মানুষের কাছে শুনলাম বাজিতখিলায় বোতলবাড়ি দিছে। পরে ভাবলাম এইডা আবার কেমন বাড়ি? তাই দেখতে আসলাম। দেখলাম ইটের বদলে বোতল দিয়ে ঘর দিছে। এইটা দারুণ হইছে।’
আরেক দর্শনার্থী হাফিজুর বলেন, ‘কলেজের বন্ধুদের কাছে শুনছি বোতলবাড়ির কথা। এর আগে দেখি নাই। তাই দেখতে আসলাম।
‘বাড়িটা অনেক সুন্দর হইছে। তাই একটা সেলফি তুলে রাখলাম।’