বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) একাংশের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজসহ অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী।
সংগঠনটির সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায় স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ৭ জুন, বুধবার সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান ফেসবুকে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ এবং বাসদ নেতা ইমরান হাবিব রুমনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় বাসদ এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের রাজনীতি ত্যাগ করার ঘোষণা দেন এবং তিনি অভিযোগ তুলেছেন, বাসদের মধ্যে এই ধরনের যৌন নিপীড়নের ঘটনা অতীতেও বারবার ঘটছে এবং বরাবরই বাসদ এই ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে।
‘এ দেশের মেহনতী মানুষের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আমাদের দীর্ঘদিনের মিত্র। তাদের সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের জোটবদ্ধ আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে, কিন্তু ছাত্র ফ্রন্ট সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান কর্তৃক বাসদ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আনীত যৌন নিপীড়নের অভিযোগসমূহ বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীকে স্তম্ভিত করেছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রে একজন নারী সমাজের নানা ধরনের প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় প্রগতিশীল রাজনীতিতে যুক্ত হন, কিন্তু রাজনীতিতে এসে তিনি যখন যৌন নিপীড়নের শিকার হন এবং তার সহযোদ্ধারা তা সুরাহা না করে বরং অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া, ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা ইত্যাদিতে লিপ্ত হন, তখন তা প্রশ্নবিদ্ধ করে সমাজ পরিবর্তনের এই রাজনীতিকেই।
‘নারী প্রশ্নে কমিউনিস্ট ও বামপন্থিদের অবস্থান খুব সুস্পষ্ট। পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে, নারী-পুরুষের সামাজিক ও আইনি সমতার দাবিতে বিশ্বজুড়ে লড়াই সংগ্রামে কমিউনিস্টদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। সমাজে নারীর অবস্থানের ওপর নির্ভর করে সমাজের অগ্রগতি। নারী প্রশ্ন এড়িয়ে পুঁজিবাদের এই দুনিয়ায় মানুষ কর্তৃক মানুষের শোষণ বন্ধ করে একটি সামাজিক মালিকানার সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণ অসম্ভব।’
এতে বলা হয়, ‘বাসদের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া যৌন নিপীড়ন, জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানোসহ এমন গুরুতর ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু সমাধান না হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাসদের প্রাক্তন কর্মীদের কাছ থেকে অতীতের আরও কিছু অভিযোগ সামনে আসছে, কিন্তু এতকিছুর পরেও বাসদ কিংবা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কাছ থেকে এই সকল বিষয়ে কোনো বক্তব্যই পাওয়া যায় না; বরং তা এড়িয়ে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিকটিম ব্লেমিংয়ের আড়ালে নারীদের ওপর যৌন দখলদারিত্বের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশই ঘটাচ্ছেন বাসদ নেতা-কর্মীরা, যা পুঁজিবাদী ও পিতৃতান্ত্রিক সমাজের নিপীড়নের সংস্কৃতি এবং বৈষম্যমূলক কাঠামোকেই টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী মনে করে আগামী দিনে বাংলাদেশের সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতিতে বাসদ যদি অগ্রমুখী ভূমিকা রাখতে চায়, নিজেদেরকে যদি বিপ্লবী পার্টি মনে করে, তাহলে বাসদ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগসমূহের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের পার্টি থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্বাধীন, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল এবং বাসদের মধ্যে কোনো পার্থক্যই থাকবে না।
‘বাসদসহ বাংলাদেশের সকল বামপন্থি কমিউনিস্ট রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে দলসমূহের অভ্যন্তরে নারী নিপীড়নসহ যৌন নিপীড়নের ঘটনা রোধে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল গঠন এবং তা কার্যকর করার। এ ছাড়াও বামপন্থি, কমিউনিস্ট নারী কর্মীরা সংগঠনের অভ্যন্তরে যৌন নিপীড়নসহ সকল ধরনের পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম পরিচালনা করবে বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করি।’