বাংলাদেশ ২০২৬-২৭ মেয়াদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের ক্যাটাগরি ‘সি’-এর সদস্য হিসেবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে।
আসন্ন এ নির্বাচনে বাংলাদেশের পক্ষে নরওয়েসহ অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন কামনা করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হকোন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাৎ করতে এলে উপদেষ্টা এ সমর্থন কামনা করেন।
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মেরিটাইম কান্ট্রি। আমাদের ১টি গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মোট ৪টি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বিভিন্নভাবে নদনদী ও মেরিটাইম সেক্টরের ওপর নির্ভরশীল। বিদ্যমান তিনটি বৃহৎ সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় চুয়ান্নটি প্রধান নদীবন্দর রয়েছে। হাজারের ওপর নদনদী দেশজুড়ে জালের মতো বিস্তৃত। দেশে ১০ হাজার কিলোমিটারের অধিক বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ নৌপথ রয়েছে। দেশের দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগরের অবস্থান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বকে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশের তৈরি জাহাজ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মেরিটাইম সেক্টরকে আরো এগিয়ে নিতে এবং মেরিটাইম সেক্টরের বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখতে বাংলাদেশ আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘোষণা করেছে।
এ সময় উপদেষ্টা বাংলাদেশের সামুদ্রিক ঐতিহ্য, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত অবস্থান এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান অবদান তুলে ধরেন।
তিনি জানান, মেরিটাইম সেক্টরে বাংলাদেশের শক্তিশালী অংশ গ্রহণ রয়েছে। এ সেক্টরের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থার (আইএমও) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়েও বাংলাদেশের ভূমিকা রয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে ৫ হাজারের বেশি জাহাজ, ৯৫টি সমুদ্রগামী ও ২০ হাজারের বেশি উপকূলীয় জাহাজ আসে।
তিনি টেকসই সামুদ্রিক উন্নয়নের প্রতি দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং আইএমওয়ের কার্বনমুক্ত ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থনের কথা জানান।
তিনি আরও বলেন, জাহাজ পুনর্ব্যবহার খাতে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ১২০ জনের বেশি নারীসহ ২১ হাজার প্রশিক্ষিত নাবিক দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা, নাবিক কল্যাণ ও জেন্ডার অন্তর্ভুক্তিতে অবদান রাখছে। উপদেষ্টা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জাহাজ শিল্পে নরওয়ে সরকারকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, উন্নয়ন সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জাহাজ নির্মাণ ও পুনর্ব্যবহার খাতে নরওয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। নরওয়ের বিভিন্ন কোম্পানি ও জাহাজ শিল্পসহ অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ সময় রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আইএমও কনভেনশন বাস্তবায়ন, ডিজিটালাইজেশন ও সমুদ্র দূষণ রোধে বাংলাদেশের সতর্ক অবস্থানের প্রশংসা করেন।
তিনি বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে পরিবেশ সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, মাতারবাড়ি ও মোংলা গভীর সমুদ্রবন্দরের ডকইয়ার্ড নির্মাণে নরওয়ে কারিগরি সহায়তা ও আর্থিক বিনিয়োগ করতে পারে।