গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনের পর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার বিকেলে টঙ্গী প্রেসক্লাবের হলরুমে এই সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম ও তার মায়ের ওপর হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আতাউল্লাহ মন্ডল।
তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নানান মিথ্যাচার করছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে এবং যে কোন সময় তিনি মারা যেতে পারেন। বিভিন্ন জায়গায় জাহাঙ্গীর আলমের গাড়িবহরে নৌকার প্রার্থীরা হামলা করছেন বলেও অভিযোগ করছেন জাহাঙ্গীর। আসলে সুষ্ঠু নির্বাচনকে অসুস্থ করতে জাহাঙ্গীর এই নাটক করছেন।
আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, যারা নির্বাচন প্রচার প্রচারণায় হামলা ভাঙচুর চালাচ্ছে তারা আওয়ামী লীগের কর্মী হতে পারে না। তারা আওয়ামী লীগের কেউ না। তারা আওয়ামী লীগের গুপ্তচর হিসেবে ঢুকে আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে । এ সব ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে যদি কেউ এমন কর্মকাণ্ড করে তাদের বিরুদ্ধে মহানগর আওয়ামী লীগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, জাহাঙ্গীর আলম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন বিএনপি, জামায়াতের লোকজনকে দলে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন।
সেসব লোকজন দিয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপাচ্ছেন দাবি করে আতাউল্লাহ মন্ডল বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে যেখানেই যে হামলা হচ্ছে সব জাহাঙ্গীর আলমের লোকজনই করছে। তারা নৌকার প্রার্থীর উপর দায় চাপাচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইলিয়াস আহম্মেদ,গাজীপুর চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি আনোয়ার সাদাত প্রমুখ।
এদিকে, শেষ মুহূর্তে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের চলছে জোর প্রচারণা। ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবার জমজমাট প্রচারে প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ছুটছেন নগরীর অলিগলিতে। পথসভা, কর্মীসভাসহ নানা উপায়ে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন তারা। ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
শুক্রবার সকালে টঙ্গী এলাকায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান। দুপুরে টঙ্গী বাজার বড় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগে বের হন আজমত উল্লা।
টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকার মধুমিতা রোড, জামাই বাজার, পাগাড় ফকির মার্কেট, ঝিনু মার্কেট, মরকুন, শিলমুন, দত্তপাড়া, এরশাদনগর, ও গাজীপুরা এলাকায় গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি।
এ সময় আজমত উল্লা খান বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ শান্ত এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন তা গাজীপুরে বিরাজমান। আমাদের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই এবার ভোটার হয়েছেন। তাদের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার স্বার্থে যা যা প্রয়োজন বিশেষ করে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে আমি এবং আমার দল কাজ করছি।নগরীর মীরের বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন।
এ সময় তিনি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রচার-প্রচারণা নির্বিঘ্নে হওয়া উচিত, কাউকে বাধা দেওয়া সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। যারা এগুলো করে তাদের অনুরোধ করব এসব থেকে বিরত থাকার জন্য। নির্বাচন কমিশন এজন্য ব্যবস্থা নেবে। তবে আমার মনে হয় ভোটের পরিবেশ ভালো রয়েছে।
এদিন স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহানূর ইসলাম রনি পুবাইলের হারবাইদ, মাজুখান, নন্দিবাড়িসহ আশপাশের এলাকায় গণসংযোগ করেন। এসময় তিনি তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে হাতি মার্কায় ভোট প্রার্থনা করেন।
এ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সালনা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে গণসংযোগ করেন।