ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকে ফটকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী কেন বিশেষ মোনাজাত করেছেন, তার কারণ জানতে চেয়েছে প্রশাসন।
কারণ দর্শানোর জন্য বুধবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুলের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমারের সই করা নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, ‘মো. বাহালুল হক চৌধুরীর ছুটি মঞ্জুর ও কাজে যোগদানের আবেদন কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। তিনি গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টার দিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে উপাচার্য ভবনের ফটকের সামনে সমবেত হয়ে বিভিন্ন ধরনের অসংগতিপূর্ণ বক্তব্য ও মোনাজাত পরিচালনা করেছেন। এ ধরনের আচরণ খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত বলে কর্তৃপক্ষের কাছে মনে হয়েছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়, ‘কেন এবং কী উদ্দেশ্যে তিনি এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছেন, সে বিষয়ে চিঠি ইস্যুর তারিখ থেকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের কাছে জবাব দিতে বলা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের স্ত্রীর জানাজায় অংশ নিতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানসহ দুই উপ-উপাচার্য। তাতেই ক্ষুব্ধ হন বাহালুল।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাহালুল উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে বিশেষ মোনাজাত করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি না করার ঘোষণা দেন। ওই সময় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তার সঙ্গে ছিলেন।
মোনাজাতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল ঢাবি উপাচার্যের উদ্দেশে বলেন, ‘মনির ভাইয়ের স্ত্রী মারা গেছে। সেখানে ভিসি, প্রো-ভিসি কেউ নাই। আমরা কার কাছে বিচার দেব?
‘আপনি (আল্লাহ) ছাড়া তো কেউ নাই। আল্লাহ তুমি দেখো। আপনাদের জানাজায় আসায় দরকার নাই। আমি আপনার চাকরি করব না।’
বাহালুল আরও বলেন, ‘আল্লাহ, এ এলাকা ভালো না। এলাকার মানুষ মোনাজাত ধরতে চায় না। এই এতিম বাচ্চা নিয়ে আমি দাঁড়িয়েছি। তুমি দেখো।’
পরে এ নিয়ে ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। এ ঘটনায় হতবাক হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তারা জানান, কয়েকদিন ধরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভিন্ন আচরণ করছেন। তিনি মানসিক অশান্তিতে রয়েছেন।
সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। আমার মনে হয় উনার বিশ্রাম দরকার। উনি মানসিক চাপে রয়েছেন।’
এই ঘটনার পর বাহালুল হককে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএইমএইচ) ভর্তি করা হয়।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুলকে অনুপস্থিত দেখিয়ে পরীক্ষা উপনিয়ন্ত্রক মো. ছানাউল্লাহকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দেয় ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বাহালুল হক চৌধুরীকে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ হয়নি।