আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মঙ্গলবার জামিন পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল (বিএসএমএমইউ) ছেড়ে যান তিনি।
ৱআলোচিত এই এমপি এতদিন কারা তত্ত্বাবধানে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কারাগার ঘুরে জামিনের নথিপত্র হাসপাতালে পৌঁছালে সেখান থেকেই মঙ্গলবার দুপুরে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
হাসপাতালের বাইরে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা ফুলের মালা দিয়ে হাজী সেলিমকে বরণ করে নেন। পরে তিনি গাড়িতে করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার আবদুস সেলিম নিউজবাংলাকে জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১টায় কারাগারের একটি টিম হাজী সেলিমের জামিনের কাগজপত্র নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে যান। সেখানে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে কারা পুলিশের নিরাপত্তা সরিয়ে নেয়া হয়।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে লালবাগ থানায় ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলায় ২০০৮ সালে বিচারিক আদালত তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাজী সেলিম হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট ২০১১ সালে তাকে খালাস দেয়। এই খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।
২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ আপিল বেঞ্চ হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করে রায় দেয়। রায়ে হাজী সেলিমের আপিল আবেদনটি হাইকোর্টকে নতুন করে শুনানি নিয়ে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর মামলাটির আর শুনানি হয়নি।
আপিল বিভাগের শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৯ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়। রায়ে ১০ বছরের দণ্ড বহাল থাকলেও তিন বছরের সাজা থেকে খালাস পান হাজী সেলিম। একইসঙ্গে রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।
২০২২ সালের ৯ মার্চ এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। রায়ে ৩০ দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
গত বছরের ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় থাইল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন হাজী সেলিম। আদালতের দণ্ড মাথায় নিয়ে তিনি দেশ ছাড়ায় শুরু হয় বিতর্ক।
ওই বছরের ৫ মে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন হাজী সেলিম।
২২ মে হাইকোর্টের রায় অনুসারে আত্মসমর্পণ করার পর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক শহিদুল ইসলাম তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে কারাগারে ডিভিশন ও সুচিকিৎসার আবেদন জানান। বিচারক কারাবিধি অনুযায়ী জেল কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। ২৪ মে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই দণ্ডের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়। একইসঙ্গে জামিনের আবেদন করেন হাজী সেলিম।