ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে না গিয়ে আলাদাভাবে অংশ নেয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নেত্রী ও তার অনুসারীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। ওই নেত্রী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী বলে জানা গেছে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে শুক্রবার রাতে এ হামলায় হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখি ও সাধারণ সম্পাদক সানজিনা ইয়াসমিন নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ করেছেন মারধরের শিকার নেতাকর্মীরা।
মারধরের শিকার ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম তানিয়া আক্তার তাপসী। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক উপ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক।
মারধরের ঘটনায় তানিয়া আক্তার তাপসীসহ তার পক্ষের আরও দুই নেত্রী এবং এক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিক্যাল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদিকে খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নিলুফার পারভীন, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই হলের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হল ছাত্রলীগের সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখি ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক সানজিনা সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী। আর তারা দু'জনই ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বেনজীর হোসেন নিশির ছোট বোন হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে তানিয়া আক্তার তাপসী হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রওনক জাহান রাইনের ছোট বোন। রাইন এবং নিশির মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
তবে হামলার বিষয়ে হল সভাপতি কোহিনূরের অভিযোগ, ‘তাপসী এবং তার গ্রুপই প্রথম হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় তাদের সাত নেতাকর্মী আহত হন।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে অংশ নেয়ার কথা। তবে তাপসী নিজের অনুসারীদের নিয়ে আলাদাভাবে কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরে হলে ফিরে তাপসী ও তার অনুসারীরা ঝামেলা সৃষ্টির জন্য হামলা চালায়।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মারধরের শিকার একজন বলেন, ‘আমরা হলের সব নেতাকর্মীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে যেতে চেয়েছিলাম। তবে সংগঠন থেকে দেয়া নির্ধারিত শাড়ি আমরা পাইনি। শাড়ি না থাকার অজুহাতে আমাদের না নিয়েই হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন। পরে হলে ফিরলে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়।’
এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটুক তা আমরা চাই না। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। গতকাল হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে সুষ্ঠু সমাধান করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা গতকালের ঝামেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সবাইকে একজনের রাজনীতি করতে হবে এমন নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ একজন প্রভাব খাটিয়ে বলবে সবাইকে এক দিকে রাজনীতি করতে হবে, ছাত্রলীগ এমন রাজনীতি করে না। সবাই শেখ হাসিনার কর্মী।’
এই বিষয়ে জানতে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নিলুফার পারভিনকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। হল প্রশাসন বিষয়টি দেখছে। তাদের মধ্যে সুষ্ঠু একটা সমাধান হয়েছে।’