থার্টি ফার্স্ট নাইটে নিরাপত্তার নামে পুলিশি ব্যারিকেডে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন রাজধানীর সাধারণ মানুষ। নগরীর বেশকিছু পয়েন্টে সব রাস্তা ৮টার আগে থেকেই বন্ধ। গাড়ি বন্ধ। অগত্যা হেঁটে বাসাবাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন সবাই। অনেকে আবার রাস্তা খুলে দেয়ার অপেক্ষায় গাড়িতেই অবস্থান করছেন।
খ্রিষ্টীয় নতুন বছর শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশান-বারিধারা, বাড্ডা লিংক রোড, হাতির ঝিলসহ কয়েকটি পয়েন্টে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নিরাপত্তার অজুহাতে গত কয়েক বছর ধরেই থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বার বন্ধ রাখা, উন্মুক্ত স্থানে কোনো আয়োজন না করা; গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বাধ্যবাধকতায় খ্রিষ্টীয় নতুন বছর বরণের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।
এই পুলিশি নিষেধাজ্ঞায় ক্ষুব্ধ নগরের বাসিন্দারা। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আরেফিন আঞ্জুম বলেন, ‘সারাবিশ্ব স্বতঃস্ফূর্তভাবে থার্টি ফার্স্ট উদযাপন করছে। আর আমাদের দেশে নিরাপত্তার কথা বলে সবাইকে সন্ধ্যার মধ্যে ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। এটা মোটেও সমাধান নয়।
‘সবাইকে ঘরে ঢুকিয়ে নিরাপত্তা দেয়ার কিছু নেই। সবাইকে উপযাপন করতে দিতে হবে। দিবে। বাইরে থাকা অনুষ্ঠানস্থলগুলোতে নিরাপত্তা দিবে। পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন সড়কেও নিরাপত্তা জোরদার করবে। যাতে সবাই বের হয়েও নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারে। এই ব্যবস্থা করা গেলে বলা যায় নগরে ডিএমপি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে।’
গুলশান লেকে একজন পথচারী বলেন, ‘সব রাস্তা বন্ধ করে এভাবে জ্যাম লাগিয়ে রাখলে রাত ২টাতেও বাড়ি যেতে পারব না। রামপুরা থেকে হাঁটা শুরু করে এই পর্যন্ত এসেছি। বাকিটুকুও হেঁটেই যেতে হবে।’
নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিকট শব্দে আতশবাজি, পটকা ফুটিয়ে বর্ষবরণে আপত্তিও আছে অনেকের। হাতিরঝিল সংলগ্ন মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘উদযাপন করা হবে, ঠিক আছে। কিন্তু বিকট শব্দে আতশবাজির কারণে বাসায় থাকা বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের সমস্যা হয়। পথঘাট খোলা রেখে বরং আতশবাজির ব্যবহার সীমিত করা উচিত।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকেই সীমিত করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাতায়াত। প্রবেশ মুখগুলোতে বসেছে পুলিশি ব্যারিকেড। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যতীত অন্যদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ ও র্যাব। সন্দেহভাজনদের তল্লাশিও করা হচ্ছে।
বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় বাড্ডার প্রগতি সরণি, তেজগাঁও লিংক রোড, হাতিরঝিলের বিভিন্ন প্রবেশ মুখে যানজট দেখা দেয়। প্রগতি সরণির যানজট মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকাতেও যানজট তৈরি হয়।
রাত ১০টার দিকে সব বাইকের চাবি আটকে রেখে এক পাশের বড় গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়া হয় বাড্ডা লিংক রোড থেকে।
রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকেই সীমিত করা হয় গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় সাধারণের চলাচল। রাত ৮টার মধ্যে বহিরাগতদের এসব এলাকা থেকে বেরিয়ে স্ব স্ব এলাকায় যাওয়ার অনুরোধ জানায় ডিএমপি।
এর আগে বছরের শেষ দিনে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সংবাদ সম্মেলন করে থার্টি ফার্স্টের নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন।