বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পিটার হাস ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ভুল দেখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

  •    
  • ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৩:৩৭

‘তিনি (হাস) যে যাবেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানা উচিত ছিল। খবর পেয়ে ওসি সিভিল পোশাকেই গেছেন। আমাদের কাছে যারা (কূটনীতিক) খবর পাঠান, তারা বের হওয়ার সময় নিরাপত্তা নিয়ে বের হন। তার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে আমি মনে করি না।’

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি নেই বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি এও মনে করেন, ৯ বছর আগে নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাড়িতে যাওয়ার আগে তার এই সফরের বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো উচিত ছিল।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে গত ১৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের শাহীনবাগের বাসায় পিটার হাস যাওয়ার পর সেখানে অন্য একটি সংগঠনের উপস্থিতির বিষয়ে রোববার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।

কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতের বিষয়টি নিয়ে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এরপর আমার আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। তবে যেহেতু আমার নির্বাচনী এলাকা, আমি সে এলাকার এমপি। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি, সেখানে দেখা গেছে, রাষ্ট্রদূত যে বাড়িতে গেছেন তার পাশের বাড়ির কয়েকজন, তারা কীভাবে জেনেছে আমি জানি না৷

‘তাদের কয়েকটি দাবি যেমন- জিয়ার আমলে তাদের নিরপরাধ পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে হত্যা করেছেন, সে বিষয়ে তাদের দাবির প্ল্যাকার্ড তার হাতে দিয়েছেন। এটুকু আমি শুনেছি।’

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, সেখানে তার নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল না। পুলিশ বাহিনী যখনই শুনেছে তখনই সেখানে ছুটে গেছে। যখনই শুনেছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেখানে যাচ্ছেন, তখন পুলিশ বাহিনীর কর্তব্য হয়ে গিয়েছিল সেখানে যাওয়া। আমাদের ওসি সিভিল পোশাকেই চলে গেছেন। এখানে তার নিরাপত্তার ঘাটতি হয়েছে বলে আমার কাছে রিপোর্ট আসেনি।’

এই সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পদক্ষেপে ভুল ছিল বলেও মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘তিনি (হাস) যে যাবেন, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানা উচিত ছিল। খবর পেয়ে ওসি সিভিল পোশাকেই গেছেন। আমাদের কাছে যারা (কূটনীতিক) খবর পাঠান, তারা বের হওয়ার সময় নিরাপত্তা নিয়ে বের হন। তার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে আমি মনে করি না।’

নিখোঁজ সুমনের বাসায় যা ঘটেছিল

২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও পেট্রল বোমা হামলার মধ্যে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় বুধবার যান পিটার হাস। সুমনের বোন ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। গত কয়েক বছরে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা এই সংগঠনে আছেন। তারা প্রায়ই নানা কর্মসূচি পালন করে সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন।

পিটার হাস হঠাৎ করেই সুমনের বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি পছন্দ করেনি সরকার। তা গোপনও রাখা হয়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত।’

আরও পড়ুন: খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত আমেরিকা: প্রধানমন্ত্রী

একই আলোচনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পিটার হাসের কাছে জানতে চান, আমেরিকায় মাসে কত গুম, খুন-ধর্ষণ হয়।

সুমনের বাড়িতে যাওয়ার পর সেখানে যায় ‘মায়ের কান্না’ নামে আরও একটি সংগঠনের সদস্যরা। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনা ও বিমানবাহিনীকে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা গড়ে তুলেছেন এই সংগঠন। তারা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।

পিটার হাসকে এই সংগঠনের সদস্যরা একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাওয়ার পাশাপাশি সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল অফিসাররা তাদের কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। তারা হাসকে নিয়ে দ্রুত ত্যাগ করেন ঘটনাস্থল।

পিটার ডি হাস সুমনের বাসায় যাওয়ার পর সেখানে হাজির হন মায়ের কান্না নামের সংগঠনের সদস্যরা। তারা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে। ফাইল ছবি

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের দূত সোজা চলে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে গিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

মোমেন তখন তার কাছে জানতে চান, কোনো হামলা হয়েছে কি না। ‘না’ জবাব আসার পর তিনি প্রস্তাব দেন নিরাপত্তা বাড়াতে। তবে এটি জানিয়ে দেন, কোনো সংগঠনের কর্মসূচি তারা আটকাতে পারেন না।

পরে বিএনপি হাসের পাশে দাঁড়ায়। তাদের অভিযোগ, সরকার কূটনীতিকদের ভয় দেখাচ্ছে। আর এই ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটাবে।

আরও পড়ুন: পিটার হাসের পাশে বিএনপি, হেনস্তার অভিযোগ

‘যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস কিছুই জানায়নি’

পিটার হাস যে সুমনের বাসায় যাচ্ছিলেন, সে বিষয়ে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সরকারকে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘তারা তো আমাদের কাছে তথ্য দেয়নি। কীভাবে তথ্য ফাঁস হলো, তার অফিস থেকে তথ্য ফাঁস হয়েছে কি না, সেটা আমরা জানি না। আর এটা আমাদের জানার কথা নয়। উনি সেখানে যাবেন সেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানার কথা ছিল৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও জানে না, আমরাও জানি না।’

সফর সম্পর্কে না জানলেও পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে গেল কীভাবে, সেটিও ব্যাখ্যা করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের প্রতিটা ওয়ার্ডে একটি বিট পুলিশিং সিস্টেম রয়েছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের ওসি সেখানে চলে গেছেন এবং তার (পিটার হাস) যাতে নিরাপত্তার বিঘ্ন না ঘটে, সে ব্যবস্থা তিনি করেছেন।’

মন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে এমনিতেই বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘তিনি যখন কোথাও যাওয়া-আসা করেন তখন তার আগে পিছে আমাদের পুলিশ বাহিনী নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এ রকম কথা আমরা কখনো শুনিনি।

‘চারজন রাষ্ট্রদূতকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেয়া হয়ে থাকে, তার মধ্যে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত একজন।... রাষ্ট্রদূতরা যে এলাকায় থাকেন, সেখানে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি তারা যখন বের হন তখনও আমাদের সিকিউরিটি নিয়ে বের হন।‘

১৪ ডিসেম্বরও কূটনীতিক পিটার হাসের সঙ্গে ছিল বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ বিভাগের আরো খবর