আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে মানিকগঞ্জের অবৈধ ভাটায় ইট তৈরির কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ হাইকোর্ট অবৈধ সব ইটভাটা ভেঙে দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
জেলা প্রশাসকের তথ্য মতে, মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় ১৪৭টি ইটভাটার মধ্যে অবৈধ ২২টি।
অবৈধ ইটভাটাগুলো হলো মানিকগঞ্জ সদরে জামাল ব্রিকস, রহমান ব্রিকস, ওয়াসিম ব্রিকস, আলী ব্রিকস, একতা ব্রিকস, এমিকা ব্রিকস, মোল্লা ব্রিকস, মালেক ব্রিকস, সোবহাস ব্রিকস ১, সোবহাস ব্রিকস ২ ও সোবহাস ব্রিকস ৩; সিংগাইরে আলী আকবর ব্রিকস, মোহনা ব্রিকস, সুমাইয়া ব্রিকস ও এএবি ব্রিকস; সাটুরিয়ায় যমুনা ব্রিকস, ফৌজিয়া ব্রিকস ও খান ব্রিকস; হরিরামপুরে স্বাধীন ব্রিকস, সততা ব্রিকস, আমিন ব্রিকস এবং ঘিওরে নুরুল ব্রিকস।
এর মধ্যে ঘিওরের নুরুল ব্রিকসের মামলা হাইকোর্টে চলমান রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সকাল-সন্ধ্যা অবৈধ ভাটাগুলোতে চলছে ইট তৈরি ও পোড়ানোর কাজ। কয়লার পাশাপাশি এসব ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কাঠের গুঁড়া। এতে বায়ুর পাশাপাশি ফসলি জমিরও ক্ষতি হচ্ছে।
কীভাবে অবৈধ ভাটায় ইট তৈরি হচ্ছে, জানতে চাইলে হরিরামপুরের স্বাধীন ব্রিকসের মালিক শীতল চৌধুরী বলেন, ‘ইটভাটার কাগজপত্রের জন্য গতবার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছিলাম।
'কিন্তু কৃষিজমির কারণে অনুমতিপত্র দেয় নাই। এ কারণে এ বছর ভাটার কাগজপত্রের জন্য ঢাকায় আবেদন করেছি। এর মধ্যে ভাটায় ইট বানানোর কাজও চলছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাগজপত্র পেয়ে যাব।’
একই কথা বলেন ওই উপজেলার আরেক অবৈধ ভাটা সততা ব্রিকসের মালিক ও বলড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন খান কুন্নু।
হরিরামপুরের অবৈধ ভাটা সততা ব্রিকসে চলছে ইট তৈরির কাজ/ ছবি: নিউজবাংলা
এ ছাড়া সদরের এমিকা ব্রিকসের অংশীদার মালিক মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘আমরা কীভাবে ইটভাটা চালাই প্রশাসন সব জানে। কারণ তাদের না জানিয়ে ভাটা চালানো সম্ভব না।’
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক অবৈধ ভাটার মালিক বলেন, ‘প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই অবৈধ ভাটা চালিয়ে আসছি। ম্যানেজ না হলে অবৈধ ভাটা এক দিনও চলতে পারবে না। হাইকোর্টের নির্দেশের পর গত বছর অবৈধ ভাটা ভাঙা হয়নি। গতবারের অবৈধ ভাটায় এবারও ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার মালিক ও প্রশাসনের যোগসাজশে এটা সম্ভব হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশে গতবার উপজেলার তিনটি অবৈধ ভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ওই সব ভাটার মালিকরা যদি ভাটার কার্যক্রম চালু করে থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূর আলম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা ২২টি। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ১১। এর মধ্যে একটিতে হাইকোর্টে মামলা চলমান আছে। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে।’
সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান চলানো হবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ সময় জেলা প্রশাসক দাবি করেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী গত বছর অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। এবারও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’