বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে পক্ষপাতে পিটার হাস: ঢাবি শিক্ষক সমিতি

  •    
  • ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ২১:০২

‘মায়ের কান্না নামে সংগঠনটি সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল জিয়ার সময়ে ১৯৭৭-৭৮ সালে বিচারের নামে হত্যা ও গুমের যে ঘটনা ঘটেছে, এতে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের মানবাধিকার রক্ষার আবেদন নিয়ে রাষ্ট্রদূতের স্মরণাপন্ন হয়েছিল। এদের সঙ্গে কথা শুনতে অপারগতা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দ্বৈত আচরণের বহিঃপ্রকাশ, যা দুঃখজনক।’

ঢাকায় নিখোঁজ বিএনপি নেতার বাড়িতে গিয়ে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস পক্ষপাত করছেন বলে অভিযোগ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আমেরিকার কর্মকর্তা মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক পক্ষের স্বার্থ-সিদ্ধির সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ এনে উদ্বেগও প্রকাশ করে শিক্ষক সমিতি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গতকাল ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস যেভাবে মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক পক্ষের স্বার্থ-সিদ্ধির সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তা উদ্বেগজনক।

“সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের মান্যবর রাষ্ট্রদূত বিএনপি সমর্থিত ‘মায়ের ডাক’ নামক একটি সংগঠনের আহ্বানে ২০১৩ সালে একজন বিশেষ ব্যক্তির নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ শুনতে ঢাকা শহরের একটি বাড়িতে উপস্থিত হন।

“একই সময়ে খবর পেয়ে ‘মায়ের কান্না' নামক সংগঠনের কর্মীরা তাদের মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি তাঁকে অবহিত করার জন্য একটি স্মারকলিপি প্রদানের চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি।’

শিক্ষক সমিতি বলছেন, ‘মায়ের কান্না নামে সংগঠনটি সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল জিয়ার সময়ে ১৯৭৭-৭৮ সালে বিচারের নামে হত্যা ও গুমের যে ঘটনা ঘটেছে, এতে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের মানবাধিকার রক্ষার আবেদন নিয়ে রাষ্ট্রদূতের স্মরণাপন্ন হয়েছিল। এদের সঙ্গে কথা শুনতে অপারগতা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দ্বৈত আচরণের বহিঃপ্রকাশ, যা দুঃখজনক।’

যা ঘটেছে

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের সকালে হঠাৎ করেই রাজধানীর শাহীনবাগে সুমনের বাসায় যান পিটার হাস। সেখানে অবস্থান করেন ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। তবে তিনি বা বিএনপি নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

সুমনের বাড়িতে যাওয়ার পর সেখানে যান ‘মায়ের কান্না’ নামের আরেক সংগঠনের সদস্যরা। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনা ও বিমান বাহিনীতে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা গড়ে তুলেছেন এই সংগঠন। তারা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।

পিটার হাসকে এই সংগঠনের সদস্যরা একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত চাওয়ার পাশাপাশি সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল অফিসাররা তাদেরকে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। তারা হাসকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

পিটার ডি হাস সুমনের বাসায় যাওয়ার পর সেখানে হাজির হন মায়ের কান্না নামের সংগঠনের সদস্যরা। তারা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে। ফাইল ছবি

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের দূত সোজা চলে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে গিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানান তিনি।

মোমেন তখন তার কাছে জানতে চান, কোনো হামলা হয়েছে কি না। ‘না’ জবাব আসার পর তিনি প্রস্তাব দেন নিরাপত্তা বাড়াতে। তবে এটি জানিয়ে দেন, কোনো সংগঠনের কর্মসূচি তারা আটকাতে পারেন না।

হাসের এই পদক্ষেপে সরকার যে অসন্তুষ্ট তা গোপন করার চেষ্টা হয়নি এতটুকু।

সেদিনই বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমেরিকা খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত।’

একই আলোচনায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পিটার হাসকে উদ্দেশ করে জানতে চান- আমেরিকায় মাসে কত গুম, খুন ও ধর্ষণ হয়।

পরদিন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, তিনি মনে করেন, হাসের সেই বাড়িতে যাওয়া উচিত হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি না তাকে কে পরামর্শ দিয়েছে সেই দিনে মায়ের ডাক নামের সংগঠনের কো-অর্ডিনেটরের বাসায় যেতে। যারাই এ পরামর্শ দিয়েছে, তারা সঠিক পরামর্শ দেয়নি। আমি মনে করি, যেই পরামর্শ দিক, সিদ্ধান্ত তো নিজের। কাজেই উনারও আসলে দিবসের দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল।’

এই ঘটনায় বিএনপি পিটার হাসের পাশে আছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেন, ‘পিটার হাসের সঙ্গে রাজধানীর শাহীনবাগে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা দুঃখজনক। আওয়ামী দুঃশাসনের কবল থেকে শুধু দেশের জনগণ নয়, বিদেশিরাও নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গাড়িতে হামলা তারই প্রমাণ।আওয়ামী লীগের নির্দেশেই এটি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।’

একই ঘটনায় বিকেলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকার আগে দেশের মানুষকে ভয় রাখত, তাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করার জন্য এখন বিদেশি কূটনীতিকদের ভয়ের মধ্যে রাখার জন্য ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে।’

‘কূটনীতিকদের আচরণ দৃষ্টিকটূ ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের বক্তব্য ও পদক্ষেপেরও সমালোচনা করা হয়।

এতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে কয়েকটি দেশের কূটনীতিকগণ যেভাবে বক্তব্য রাখছেন ও অংশগ্রহণ করছেন, তা দৃষ্টিকটূ ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন।

‘পরিতাপের বিষয় হলো যে, পশ্চিমা দেশগুলো যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকারের কথা বলে, অথচ তারাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের স্বঘোষিত খুনি ও একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি যে কোনো ধরনের মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার জানিয়ে বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথীতযশা শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা ও মানবাধিকার লংঘন এবং বিভিন্ন সামরিক শাসনামলে হত্যা ও গুমের বিয়য়েও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের সুস্পষ্ট বক্তব্য দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিদেশি কূটনীতিকদের শিষ্টাচার বজায় রেখে পেশাগত দায়িত্ব পালনে ও সমাজের সকল শ্রেণি-গোষ্ঠীর মানুষের মানবধিকার রক্ষায় সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর