‘২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে কুপিয়ে আমার স্বামী আনওয়ার হোসেনের একটি হাত কেটে দেয়। দুটি পা ভেঙে চুরমার করে দেয়। তার মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। আমার স্বামীর কী অপরাধ ছিল?’
পারভিন আক্তারের কণ্ঠে ঝরে পড়ে এই আকুতি। শনিবার দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা এসব কথা বলেন।
২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের প্রায় ৫০ জন সদস্য এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এই মানবন্ধনের আয়োজন করে ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম।
সমাবেশে অংশ নিয়ে ভুক্তভোগী পারভিন আক্তার বলেন, ‘২০১৩-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা পেট্রল বোমা এবং অগ্নিসন্ত্রাস করে সাধারণ মানুষদের পুড়িয়ে মেরে ফেলে। তখন আমার স্বামী তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। এটাই কি আমার স্বামীর অপরাধ? আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
তিনি বলেন, ‘যখন আমার স্বামী মারা যায়, তখন আমার দুইটা সন্তান ছিল। জীবনের সাথে লড়াই সংগ্রাম করে আমি তাদের নিয়ে বেঁচে আছি। এই বিএনপির সন্ত্রাসীরা আবার মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের কথা বলে! কই তাদের গণতন্ত্র?
আরেক ভুক্তভোগী সালাহউদ্দীন ভুইয়া বলেন, ‘সে সময় আমি ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের একটি দোকানে চাকরি করতাম। ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ১০টায় যাত্রাবাড়ী কোনাপাড়া যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে এক বিকট শব্দ হয়। সেদিন বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ-হরতাল ছিল।
‘কিন্তু আমার কী দোষ? আমি তো কোনো দল করতাম না। চাকরি করতাম। আমার হাত দুইটা দেখেন। আমি আজও মৃত্যুর সাথে লড়ছি। আমার এখনও শ্বাসকষ্ট হয়। খেতে পারি না, ঘুমাতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলেই ভালো হতো। আমাকে দেখার মতো কোনো লোক নেই। আমি এখন আমার পরিবারের বোঝা হয়ে গেছি। কারণ আমি তো কিছু করতে পারি না। আপনারা যদি পারেন, তাহলে আমার জন্য কিছু করেন। আর বিএনপি-জামায়াত কেন আমার এই ক্ষতি করল, সেটির আমি বিচার চাই।’
ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৪ সালে আমার বাবা জীবনের সচ্ছলতা ফেরানোর জন্য কাতার যাওয়ার জন্য বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে কুমিল্লায় পেট্রল বোমা হামলায় বাবাসহ তিনজন নিহত এবং একজন আহত হন। দীর্ঘ আট বছরেও কোনো বিচার পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবার কী দোষ ছিল? তিনি তো কোনো রাজনীতি করতেন না। ছিলেন সাধারণ কৃষক। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরানোর জন্য বিদেশ যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।
‘আমাদের একটাই দাবি, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।’
মানববন্ধনে ২০১৪ সালের আগে কর্তব্যরত অবস্থায় রাজশাহীতে আহত পুলিশের উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি এসআই ছিলাম। শালবাগানে আমার ডিউটি ছিল। তারা লাঠি-ইট-হেলমেট দিয়ে অসংখ্যবার আমার ওপর হামলা করেছিল। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গেছি। মানুষকে শান্তিতে রাখার জন্য আমরা ডিউটি করেছি। এই জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা আমার ওপর হামলা করে। হেলমেট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। আমি ভারসাম্য রাখতে পারি না এখন। আমার কষ্ট হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এই সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করি।’