রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির সমাবেশস্থলে শুক্রবার বিকেল থেকে নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখর রাখলেও রাত বাড়ার সঙ্গে অনেকটা নীরব হয়ে পড়ে মাঠটি।
বিকেলে সমাবেশের জায়গা চূড়ান্ত হওয়ার ঘোষণার পরপরই নেতা-কর্মীরা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। সন্ধ্যা হতেই মাঠটি কানায় কানায় ভরে যায়। পরে বাকি নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলের আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন।
শুক্রবার রাত ১২টার পরে সরেজমিনে দেখা যায়, নেতা-কর্মীরা মাঠে চাদর, পেপার বা গামছা বিছিয়ে শুয়ে পড়েন, অনেকে শোয়ার প্রস্ততি নেন।
শুয়ে শুয়ে ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের সমাবেশস্থলের বর্ণনা দিচ্ছিলেন নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আসা এক বিএনপি কর্মী।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বউ চিন্তায় ছিল। রাস্তাঘাটে তো তল্লাশি করে আটক করা হচ্ছিল। কখন কী হয়। কিন্তু আমি চালাক আছি। চালাকিটা বলব না। বউ খুব খুশি এত মানুষ দেইখা, খালেদা ম্যাডামের নাম নিয়া স্লোগান শুইনা।’
সারারাত সজাগ কাটাতে চান বেশ কিছু নেতা-কর্মী। তারা ঘুমাবেন কি না- এমন প্রশ্নে বলেন, ‘সবাই ঘুমালে চুরি হয়ে যাবে। আমরা গার্ড হিসেবে পাহারায় আছি। সজাগ থাকব, তাই সারারাত খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত কলা-রুটি নিয়ে আসা হইছে। অসুবিধা হবে না।’
সমাবেশস্থলে রাত ১২টার পর মাইক লাগানোর কাজ শুরু হয়। নেতা-কর্মীদের সহায়তায় মঞ্চও তৈরি হয়ে যায় অল্প সময়ে।
ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকা। নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের ছবি লাগানো পোস্টার দেখা গেছে।
ঢাকার এই সমাবেশকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ চোখে পড়ার মতো। রাতের বেলাও রোদ চশমা পরে সমাবেশস্থলকে পেছনে রেখে ছবি তুলতে দেখা গেছে কয়েকজনকে।
বেশির ভাগ নেতা-কর্মীই মোবাইল ফোনে লাইভ দেয়ার চেষ্টা করলেও পর্যাপ্ত ইন্টারনেটের অভাবে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন।
গোলাপবাগ মাঠে শনিবার বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান।
এই সমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। গ্রেপ্তার না হলে এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু সমাবেশ সঞ্চালনা করবেন। আর ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানু উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।’
নাশকতার মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। একই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকেও কারাগারে নেয়া হয়।
গত কয়েক দিন ধরে নয়াপল্টনে সমাবেশ আয়োজনের দাবিতে সরকার ও বিএনপির অনড় মনোভাবের পর অচলাবস্থার নিরসন হয়েছে। গোলাপবাগ মাঠে দলটির সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি পাওয়া গেছে।