সাপ্তাহিক ছুটিরদিনে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী সংকটের কারণ দেখিয়ে স্বল্প সংখ্যক লঞ্চ চলাচল করছে। বিএনপির ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে লঞ্চ বন্ধ রাখার কথা উঠলেও, যাত্রী না থাকায় অপেক্ষাকৃত কম লঞ্চ চলছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিক নেতারা ও নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার লঞ্চ টার্মিনাল ও পন্টুনে দেখা যায়, পুরো টার্মিনালে কেবল ৭টি লঞ্চ। এগুলোর একটি বরিশালের উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে যাবে। অন্যসময়ে এই রুটে নিয়মিত ৩-৪টি লঞ্চ চলাচল করে; সেখানে একমাত্র লঞ্চটিতেও নেই যাত্রী। এ ছাড়া পটুয়াখালী, বগা ইলিশাসহ ভোলা রুটের লঞ্চেও রয়েছে যাত্রী সংকট।
পুরো সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে তেমন যাত্রীর দেখাও মেলেনি। কিছু যাত্রীকে লঞ্চে মালপত্র উঠানো হচ্ছে। তবে সদরঘাটের চিরচেনা হাঁকডাক নেই বলেলেই চলে।
সদরঘাটের নৌ পরিবহন দপ্তর থেকে জানা যায়, শুক্রবার সারাদিনে ১৭টি লঞ্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে গেছে। সেগুলোতে যাত্রী থাকলেও তা পুরো লঞ্চের ধারণক্ষমতার কেবল ২৫-৪০ শতাংশ। রাতে আরও ৭টি লঞ্চ যাবে। এসব লঞ্চও যাত্রীর অপেক্ষায় দেরিতে ঘাট ছাড়বে।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৭০-৭৭টি লঞ্চ ছেড়ে যায়; সমানসংখ্যক লঞ্চ আসে। তবে বৃহস্পতিবার ঘাট থেকে ৩৩টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। শুক্রবার আরও কমে তা নেমে এসেছে ২৪-এ।
লঞ্চ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যাত্রী সংকট দীর্ঘদিন ধরেই। মালপত্র পরিবহন করে চলতে হচ্ছে লঞ্চ মালিকদের। আর ভাড়াও সরকার নির্ধারণ যেটা করে দিয়েছে তার থেকে অনেক কম নেয়া হচ্ছে। তবুও যাত্রী নেই। কেবিনের যাত্রী থাকায় কোনোভাবে লঞ্চগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে।
শুভরাজ লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরিশাল যাবে। লঞ্চটির টিকিট বিক্রেতা গোলাম কিবরিয়া জানান, ঘাটে লোকই নেই। টিকিট বিক্রি করার কোনো উপায় দেখছি না। এসময় কেবিন পাওয়া যায় না। আর আজকে গুটি কয়েক কেবিন ছাড়া সবগুলোই ফাঁকা।
কেন এই যাত্রী সংকট প্রশ্নে তিনি জানান, বিএনপির সমাবেশের কারণে যাত্রী সংকট তা নয়, অনেকে ভয়েই যাতায়াত করছেন না। আর যারা আসার তারা বিভিন্ন উপায়ে অনেক আগেই চলে এসেছেন।
এদিকে এম. কে শিপিং লাইন্সের এক জরুরি নোটিশে জানানো হয়েছে, ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে লঞ্চ ছেড়ে গেলেও, বরগুনা থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে আসবে না। শুক্রবার লঞ্চ চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। শনিবার ঢাকা থেকে বরগুনায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকলেও বরগুনা থেকে ঢাকায় লঞ্চ ছেড়ে আসবে। এ ছাড়া ঢাকা-ইলিশা রুটে রাতে লঞ্চ ছেড়ে গেলেও ইলিশা থেকে কোনো লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে না।
শুক্রবার ঢাকা থেকে বন্ধ থাকলেও ইলিশা থেকে লঞ্চ ছেড়ে আসবে। শনিবার ঢাকা থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেলেও শনিবার ইলিশা থেকে ঢাকায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। রোববার থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়।
লঞ্চ কোম্পানিটি অবশ্য নৌচলাচল বন্ধের কোনো কারণ জানায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘নৌযান চলাচল চালু রাখা কিংবা বন্ধ রাখার বিষয়ে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা পেলে তখন চালু বা বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এখন আমাদের যাত্রী সংকট, সেজন্য এমনিতেই তেল খরচও উঠেনা।
‘আজ আমার একটি লঞ্চ মাত্র ৭০ জন যাত্রী নিয়ে এসেছে। আমি এই লঞ্চ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাত্রী সংকটে কেউ লঞ্চ বন্ধ রাখলে বা চালু রাখলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেন, ‘আমাদের লঞ্চ এমনিতেই কম চলে। আর আমরা লঞ্চ বন্ধ রাখার কেউ না। এটা আমি আগেও বলেছি।
‘মালিকপক্ষ যদি তেলের খরচ না মেটাতে পারে তাহলে লঞ্চ বন্ধ রাখলে আমরা তো আর কিছু করতে পারব না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখানে কোনো বিষয় নয়। যাত্রী না থাকলে নিজের ক্ষতি করে তো আর কেউ লঞ্চ নামাবে না।’
বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. শহীদ উল্যাহ বলেন, ‘কোনো দুর্যোগ বা বৈশ্বিক সমস্যা না হলে সরকার লঞ্চ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় না। আমি সার্বক্ষণিক সিসিটিভিতে মনিটর করছি। আজ সকালে বরিশাল থেকে আসা লঞ্চে মাত্র ১৮ জন যাত্রী ছিল। বরিশাল থেকেও আজ মাত্র একটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসবে। মূলত যাত্রী সংকটের কারণেই লঞ্চ চলাচল কম।’
এদিকে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে বুড়িগঙ্গার এপার থেকে উপারে যাত্রী পরিবহন করা খেয়া নৌকাসহ ইঞ্জিন চালিত নৌকাও বন্ধ রেখেছে সদরঘাট নৌপুলিশ। এ ছাড়া বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে সদরঘাট অবস্থান নিয়েছেন।