একাত্তরে হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে টাঙ্গাইলের দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্ত প্রতিবেদনটি দ্রুতই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর দাখিল করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান সমন্বয়ক সানাউল হক।
এটি তদন্ত সংস্থার ৮৭তম প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বেড়াডাকুরী গ্রামের বাসিন্দা রাজাকার কমান্ডার কোহিনুর ওরফে মনিরুজ্জামান কোহিনুর ওরফে মনিরুজ্জামান ও চাতুটিয়া (গোটাংরা) গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর ওরফে শা আ ম আলমগীর তালুকদারের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগে তদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৮ জুন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মুসলিম উদ্দিন মিয়া ওরফে মুসলিম মাস্টারকে রাজাকার কোহিনুর ও তার সহযোগী রাজাকারেরা নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ গুম করেন।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাজাকার কোহিনুর অন্যান্য রাজাকারসহ পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে মুসলিম মাস্টারের বাড়ি পুড়িয়ে দেন। একই দিন মুসলিম মাস্টারের শ্বশুরবাড়ি গিয়ে তার দুই মেয়েকে আর্মিদের হাতে তুলে দিতে বলে। তাদের না পেয়ে ওই বাড়ি থেকে আবুল মনসুর মোহাম্মদ মাজহারুল হাসান তালুকদার নামে একজনে তুলে নিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর তাকে কাদেরিয়া বাহিনী ক্যান্টনমেন্ট থেকে উদ্ধার করে।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাজাকার কোহিনুর ও আলমগীর হানাদার বাহিনীর সহায়তায় শাহীন হাওলাদার, শহীদ দুদু ফকির, শহীদ আমজাত ফকিরদের তাদের বাড়িতেই গুলি করে হত্যা করে এবং মোছা. সমলা বেগমকে উরুতে গুলি করে জখম করে। এরপর তারা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করে যাকে যেখানে পায় গুলি করে। মুক্তিযোদ্ধা মনে করে তারা ৪/৫ জন নিরস্ত্র লোককে গুলি করে হত্যা করে।
একদিন তারা মাহমুদপুর থেকে পানকাতা গ্রামের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৭জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে এবং ২৫/৩০টি বাড়ির মালামাল লুট করে অগ্নিসংযোগ করে।
তাদের পরিচয়
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১ ডিসেম্বর কাদেরিয়া বাহিনী ও ভারতীয় তথা যৌথ বাহিনীর অভিযানে টাঙ্গাইল জেলা মুক্ত হয়। টাঙ্গাইল জেলা আলবদর কমান্ডার মনিরুজ্জামান কোহিনুর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে পশ্চাৎপসরণ করে ঢাকায় আশ্রয় নেন।
১৬ ডিসেম্বর রমনা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যৌথবাহিনীর কাছে তিনি আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ভারতের জব্বলপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন।
শিমলা চুক্তি অনুযায়ী ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে কোহিনুর পাকিস্তানে আশ্রয় নেন এবং সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে তিনি জাপান যাযন। ২০০২ সালে একটি মহলের যোগসাজশে কৌশলে বাংলাদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বাংলাদেশে আসে তিনি।
রাজনৈতিক পরিচয়ে জানা যায়, কোহিনুর মুসলিম লীগের সমর্থক। আর রাজাকার আলমগীর জামায়াতের সমর্থক।