বরিশাল নগরীতে ডাকাত আতঙ্কে মঙ্গলবার রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন বাসিন্দারা। গভীর রাত থেকে ডাকাত হানা দিয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া হয় প্রতিটি এলাকার মসজিদের মাইকে। প্রতিরোধে অনেক এলাকায় লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে লোকজন। তবে ডাকাতদলের দেখা মেলেনি কোথাও।
পুলিশ সকালে জানিয়েছিল, গুজব ছড়ানো হয়েছে। মসজিদে এমন ঘোষণা দেয়ার কারণ জানতে গেলে নিউজবাংলাকে স্থানীয়রা জানায়, অপরিচিত কয়েকজন ব্যক্তি এসে এমন ঘোষণা দিতে বলেছে। যাচাই ছাড়াই সে কথা মেনে মধ্যরাতে মাইকিং করে এলাকার লোকজনদের আতঙ্কে ফেলায় বিব্রত মসজিদের লোকজন।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দেহেরগতি এলাকায় মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রথম ডাকাত হানা দিয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর বরিশাল নগরীতে রাত ২টা থেকে এই আতংক ছড়িয়ে পরে। প্রথমে পশ্চিম কাউনিয়ার একটি মসজিদ থেকে ঘোষণা আসে। এরপর একে একে নগরীর প্রায় সব এলাকার মসজিদের মাইকে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
নগরীর মুসলিম গোরস্থান রোড জামে মসজিদের খাদেম আব্দুল হালিম বলেন, ‘রাত ২টার দিকে কয়েকজন লোক মুখ ঢেকে মসজিদের সামনে এসে ইমাম ও খাদেমকে ডাকাডাকি করে। এক পর্যায়ে আমি দরজা না খুলে ডাকাডাকির কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকে জানায়- এলাকায় ডাকাত হানা দিয়েছে। মসজিদের মাইকে দ্রুত ঘোষণা দিয়ে সবাইকে সতর্ক করতে বলে।
‘কিন্তু আমি ঘোষণা না দিয়ে তাদেরকে মসজিদের সভাপতির বাসায় গিয়ে অনুমতি আনতে বলি। কিছু সময় তারা আমাকে ঘোষণা দিতে চাপাচাপি করে চলে যায়।’
কাশিপুরের বাঘিয়া আল আমিন জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন নেছার উদ্দিন বলেন, ‘অন্য মসজিদের মাইকে ডাকাত হানা দেয়ার খবর শুনে ঘুম ভেঙে যায়। এরপর স্বপ্রণোদিত হয়ে আমি মাইকে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাই।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেন বিষয়টি জানাননি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি উত্তেজিত ও আতঙ্কিত ছিলাম। আমার ভুল হয়ে গেছে।’
জিয়া সড়ক জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. হেলাল জানান, এলাকার বেশ কয়েকজন লোক ফোন করে মাইকে সবাইকে সতর্ক করার জন্য বলে। এ কারণে তিনি ঘোষণা দেন।
কলেজ অ্যাভিনিউ বায়তুন নূর জামে মসজিদ এলাকার শেখ কাজল বলেন, ‘রাত সোয়া ২টার দিকে পালসার মোটরসাইকেলে দুই ব্যক্তি মসজিদের সামনে এসে ডাকাত পরার খবর ঘোষণা দেয়ার জন্য ডাকাডাকি করেন মসজিদের ইমামকে। তবে মসজিদের মধ্যে থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তারা চলে যান।’
বাঘিয়া এলাকার ব্যবসায়ী মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘ডাকাতের খবরে সারা রাত আতঙ্কে থাকতে হয়েছে। মসজিদের মাইকে এমন ভাবে ডাকাত হানা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে- যেটা সত্যিই ভয়ানক ছিল।’
কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘যারা এই গুজব ছড়িয়েছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। পরিবারের সবাই সারা রাত জেগে ডাকাতের আতঙ্কে ছিলাম।’
ডাকাত আতঙ্ক ছড়ানোর পেছনে জড়িতদের শনাক্তে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ফজলুল করিম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যারা ডাকাত আতঙ্কের গুজব ছড়িয়েছে, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আমরা বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছি।’
শুধু বরিশাল নগরীই নয়, গত ২৮ নভেম্বর রাতে গৌরনদী ও ২৯ নভেম্বর রাতে মেহেন্দীগঞ্জে বিভিন্ন গ্রামে ডাকাত পড়েছে- এমন খবর মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়। উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, মেহেন্দীগঞ্জে ডাকাতির কিছু ঘটনার রেশ ধরে নগরীজুড়ে ভিত্তিহীন আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা পুলিশের।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাহান হোসেন বলেন, ‘গত ৩ ডিসেম্বর রাতে জেলার উজিরপুরে ব্যাংকের এজেন্ট শাখাসহ চারটি দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। একই রাতে বাবুগঞ্জে বিয়েবাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
‘এসব ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছেন। দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারসহ এসব ঘটনার রহস্য উদঘাটন করব আমরা।’