ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন হয়ে গেলেও নতুন কমিটি পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক দিন। বরাবরের মতো এবারও সংগঠনটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন এ নিয়েই জোর আলোচনা চলছে।
এ দুই পদে আগ্রহী প্রার্থীরা তদবির-লবিং করছেন। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, প্রতিবারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে আসে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব, তবে এবার শীর্ষ দুই পদে কে আসছেন আর তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কেউ আসছেন কি না, তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে আগ্রহ।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় দীর্ঘদিন ধরেই অকেজো পড়ে আছে। শীর্ষ নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সব ধরনের কর্মকাণ্ড করেন। দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালন করতেই তারা কার্যালয়ে যান।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের চার নেতার একজন এবং দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আসার একমাত্র পথ যোগ্যতা। এই যোগ্যতা হলো দলে অবদান, ত্যাগ, শ্রম, দায়বদ্ধতা, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য।
‘অতীতে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেকেই দায়িত্ব পেয়েছেন। এবারও যদি যোগ্যতম প্রার্থী হন, তাহলে তিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেটা গুরুত্বপূর্ণ না হয়ে তার যোগ্যতাই বিবেচ্য হবে।’
কমিটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে একজন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। তিনি নজরুল ইসলাম বাবু। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য।
এর পরের তিন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সবাই ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় থেকে। তারা হলেন মাহমুদ হাসান রিপন-মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন (২০০৬-২০১১), এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ-সিদ্দিকী নাজমুল আলম (২০১১-২০১৫), সাইফুর রহমান সোহাগ-এস এম জাকির হোসাইন (২০১৫-২০১৮), রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন-গোলাম রাব্বানী (২০১৮-২০১৯) এবং আল নাহিয়ান খান জয়-লেখক ভট্টাচার্য (২০১৯-২০২২)।
যে কমিটিতে বাবু সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তার মেয়াদ ছিল ২০০২-২০০৬। এর বাইরেও সংগঠনটির শীর্ষ দুই পদে আরও দুই-একজন বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্বে এসেছিলেন। যেমন ১৯৮৩-৮৫ মেয়াদে সভাপতি ছিলেন আবদুল মান্নান, যিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ১৯৯৪-১৯৯৮ মেয়াদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র এ কে এম এনামুল হক শামীম ছিলেন সভাপতি, যিনি বর্তমানে পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৮১-৮৩ মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়তেন। তার আগে ১৯৭৩-৭৪ মেয়াদে তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। আরেক সভাপতি মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরীও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগ দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত আওয়ামী লীগের চার নেতা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হকসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা মিলে অনেককেই প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন, তবে তারা সবাই বলছেন, কমিটি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে।
আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, স্বাচিপ এবং মহিলা লীগের ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগেও পরিচ্ছন্ন এবং বিতর্কমুক্তদের দায়িত্ব দেয়া হবে। গত বেশ কিছু দিন ধরে শীর্ষ পদে নতুনত্ব খোঁজ করা হচ্ছে।
এবারের কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কেউ আসছে, এমন আলোচনা আছে। আর এর সূত্র ধরেই ঢাবির বাইরের অনেকে প্রার্থী হতে আবেদন করেছেন।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিউল ইসলাম ফুয়াদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক হামজা রহমান অন্তর, ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামিউস সানী, চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ।