ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের ব্যাংক হিসাবসহ ওয়াসায় অনিয়মের যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক এ তথ্য জানিয়েছে।
দুদক জানায়, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে তাকসিম এ খানের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনের দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এ রিপোর্ট দাখিল করে।
ওয়াসার এমডি নিয়ে আরেকটি কোর্টে রুল বিচারাধীন। এদিকে দুদকও অনুসন্ধান করছে। তাই পৃথক করে রুল জারির প্রয়োজনীয়তা নেই উল্লেখ করে সুমনের রিটটি নিষ্পত্তি করে দেয় হাইকোর্ট।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারি আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন নিজেই। ওয়াসার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ এম মাসুম। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি।
দুদকের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা জশলদিয়া প্রকল্পের প্রায় ১১শ’ কোটি, গন্ধবপুর পানি শোধনাগার প্রকল্পের প্রায় এক হাজার কোটি, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের প্রায় এক হাজার কোটি, গুলশান-বারিধারা লেক দূষণ প্রকল্পের প্রায় ৫০ কোটি, সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-২ এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রায় ১৫ কোটি টাকার দুর্নীতি এবং ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এছাড়া তাকসিম এ খানের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও এসব হিসাবের কাগজপত্র সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য নয় এমন লোকদের দিয়ে ২০১১ সালের ৩০ মে কমিটি গঠন করে এই কমিটির মাধ্যমে সমিতির ঠিকাদারি বিলের ৪১ কোটি ৭০ লাখ ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে।
এছাড়া প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬২ হাজার ৪৮১টি পানির মিটার সমিতির অনুমতি না নিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর ও ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি চিঠি পাঠিয়ে সমিতির জনতা ব্যাংকের কারওয়ান বাজার শাখার হিসাবের সব লেনদেন স্থগিতের অভিযোগও দুদকের অনুসন্ধানে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসব কর্মকর্তাকে নোটিস পাঠানোর পর জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বক্তব্য নেয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে তাকসিম এ খানের নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে দাবি করে তা অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
নিয়োগ প্রবিধানের শর্ত না মেনে ২০০৯ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে তাকসিম এ খানের নিয়োগ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। মঙ্গলবা দুদক প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত রিটটি নিষ্পত্তি করে দেয়।