বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বুশরার জামিন চায় পরিবার, অনিশ্চয়তায় শিক্ষাজীবন

  •    
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ১৬:৪৬

ফারদিন হত্যা মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত না হয়েও বুশরার কারাবাসে ভেঙে পড়েছে তার পরিবার। বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে এ মাসের মধ্যে জামিনে মুক্তি না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সেমিস্টার থেকে ছিটকে পড়বেন।

বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আমাতুল বুশরাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার তথ্য পায়নি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রামপুরা থানার পুলিশও বলছে ফারদিন হত্যায় বুশরার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে বুশরা জামিনে মুক্তি পেলে ‘তদন্তকাজে বিঘ্ন ও পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা’ জানিয়ে তাকে কারাগারে রাখার আবেদন জানিয়েছে ডিবি। বিচারক সেটি গ্রহণ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে জেলে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই থেকে কারাবন্দি আছেন বুশরা।

তদন্তে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত না হয়েও বুশরার কারাবাসে ভেঙে পড়েছে তার পরিবার। বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে এ মাসের মধ্যে জামিন না পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সেমিস্টার থেকে ছিটকে পড়বেন। প্রচণ্ড মানসিক চাপের পাশাপাশি তার শিক্ষাজীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

বুয়েট ছাত্র ফারদিন ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পর ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। বর্তমানে হত্যা মামলাটির তদন্ত করছে ডিবি। পাশাপাশি র‌্যাবসহ আরও কয়েকটি সংস্থা ছায়াতদন্ত করছে।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার দিন বিকেল থেকে রাত ১০টা নাগাদ বুশরাকে নিয়ে রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় ঘোরাঘুরি করেন ফারদিন। এরপর রামপুরায় বুশরা যে মেসে থাকেন তার কাছাকাছি তাকে পৌঁছে দেন। এরপর আর ফারদিন বুয়েট ক্যাম্পাস বা নিজের বাসায় ফেরেননি।

ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের তিন দিনের মাথায় ১০ নভেম্বর আমাতুল্লাহ বুশরার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা ও পরিকল্পিতভাবে লাশ গোপন করার অভিযোগ এনে রামপুরা থানায় মামলা করেন তার বাবা কাজী নুরউদ্দিন রানা।

ওই দিনই তাকে গ্রেপ্তার করে রামপুরা থানার পুলিশ। তাকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে পুলিশ আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ডে দেয়। মামলাটির তদন্তভার ডিবির কাছে যাওয়ায় রিমান্ডে বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদের দায়িত্বও পায় গোয়েন্দা পুলিশ।

তবে বুশরাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যায় তার কোনো যোগসাজশ পাননি গোয়েন্দারা। তদন্তে ফারদিনের সঙ্গে বুশরার নিছক পরিচয় ও বন্ধুত্বের তথ্য পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দেয়ার পর ফারদিন যেসব জায়গায় গিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে অবগত ছিলেন না বুশরা। এমনকি ফারদিন তা জানাতেও চাননি।

‘বুশরা ফারদিনকে সেই রাতে সবশেষ ১০টা ৫৯ মিনিটে ফেসবুক মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠান। এতে তিনি জানতে চায় ফারদিন বাসায় পৌঁছেছেন কিনা? জবাবে ফারদিন লেখেন, হ্যাঁ। এরপর আর তাদের আর কোনো কোনো যোগাযোগ হয়নি।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রিমান্ডে থাকার সময় বুশরাকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে ফারদিন যতক্ষণ ছিলেন তার বর্ণনা লিখে দিতে বলা হয়েছিল। প্রতিবারই বুশরা একই জিনিস লিখেছেন। আমরা ফারদিন হত্যা মামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা এখনও পাইনি।’

তবে রিমান্ডে শেষে ১৬ নভেম্বর বুশরাকে আদালতে পাঠিয়ে তাকে কারাগারে রাখার আবেদন জানান মামলার তদন্তকারী ডিবি পরিদর্শক মজিবুর রহমান।

আদালতে আবেদনে তিনি লেখেন, ‘আমাতুল বুশরাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়ে উচ্চ আদালতের নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে মামলা-সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ডে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।

‘আসামি জামিনে মুক্তি পেলে তদন্ত কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে জেলহাজতে আটক রাখার আবেদন করছি।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী তার জামিনের আবেদন জানালেও ঢাকা মহানগর হাকিম আতাউল্লাহর আদালতে শুনানি শেষে তা নাকচ করে বুশরাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যায় গ্রেপ্তার বুশরার জামিন মেলেনি

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ফারদিন হত্যায় বুশরার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কি না, এমন প্রশ্নে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার রাজিব আল মাসুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নেগেটিভ।’

সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলেও বুশরাকে কারাগারে পাঠানোর আবেদনের কারণ জানতে চাইলে রাজিব আল মাসুদ বলেন, ‘বাদীর (ফারদিনের বাবা) ধারণা এই মেয়েই হত্যাকাণ্ডের জন্য একমাত্র দায়ী। যদিও আমরা এ রকম কিছু পাইনি। বাদীর অভিযোগ সম্পর্কে আমাকে সহানুভূতি দেখাতে হবে।

‘আর আদালতে করা আবেদনের বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, যদি সে (বুশরা) জামিন পায়ও তখন যাতে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে, তদন্ত কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়।’

আদালতে তদন্ত কর্মকর্তার এমন আবেদনে হতাশ বুশরার বাবা মঞ্জুরুল ইসলাম।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়ে রিমান্ডে থাকার সময় একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। ফারদিনের মৃত্যুতে আমার মেয়ের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে তারা জানিয়েছেন। তারা বলেছিলেন রিমান্ড শেষেই বুশরা ছাড়া পাবে। তারাই বলেছেন ভালো উকিল ধরে জামিন আবেদন করতে, কিন্তু জামিন হয়নি।’

বুশরার শিক্ষাজীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েটার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। ইউনিভার্সিটিতে ওর তৃতীয় সেমিস্টার চলছিল। অ্যারেস্ট হওয়ার পর আমরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এই সেমিস্টার ড্রপ করার আবেদন করেছি। তারা বলেছে, এই মাসে ও জামিন পেলে চলতি সেমিস্টারে থাকতে পারবে, নয়তো নতুন করে আবার ভর্তি হতে হবে।’

মেয়ের জামিনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান মঞ্জুরুল ইসলাম।

মঞ্জুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়েকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বানানো হয়েছে। আমার মেয়ে ফারদিন হত্যায় জড়িত নয়।

‘আমার মেয়েকে বিনা দোষে মামলার আসামি ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফারদিন হত্যায় প্রকৃত দোষীকে শাস্তি দেয়া হোক। আমার নির্দোষ মেয়েকে মুক্তি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

ফরদিনের সঙ্গে বিতার্কিক সূত্রে বুশরার পরিচয় হয়।

বুশরার মা ইয়াসমিন নিউজবাংলাকে জানান, স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন বুশরা। সে জন্য যারা বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেন বা পারদর্শী, তাদের সঙ্গে বুশরা নিজে থেকেই যোগাযোগ রাখতেন।

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে ফেসবুকে একটি গ্রুপের মাধ্যমে বুশরার পরিচয় হয় ফারদিন নূর পরশের সঙ্গে। পরিচয়ের পর থেকে মেসেঞ্জার ও মোবাইলে কলে বিভিন্ন সময়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলত। আর এভাবেই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।’

মামলায় বুশরাকে আসামি করা ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম এর আগে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ফারদিনের বান্ধবী বুশরার সেই ধরনের কোনো সম্পৃক্ততার তথ্য না পাওয়ায় মামলায় তার নাম উল্লেখ না করতে অনুরোধ করেছিলাম। আমরা তাকে (মামলার বাদী) পরামর্শ দিয়েছিলাম, যেহেতু সেও (বুশরা) একজন শিক্ষার্থী, পরবর্তী অনুসন্ধানে তার সংশ্লিষ্টতা উঠে এলে আমরা আসামি হিসেবে তাকে যুক্ত করব।

‘তবে তিনি (বাদী) কোনো কথা মানতেই রাজি ছিলেন না। তার বক্তব্য ছিল, যেহেতু ওই মেয়ে শেষ সময়ে আমার ছেলের সঙ্গে ছিল তাই অবশ্যই তাকে মামলার আসামি করতে হবে।

‘অগত্যা তিনি এজাহারটি যেভাবে লিখে দিয়েছেন, সেভাবেই আমরা নিয়েছি। মামলার একমাত্র আসামি হওয়ায় তাকে (বুশরা) সেদিনই গ্রেপ্তার করি।’

আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যায় বুশরার যোগসাজশ মিলছে না

ঘটনার সঙ্গে বুশরার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সন্দেহের কারণ জানতে চাইলে ফারদিনের বাবা নূরউদ্দিন রানা ১৭ নভেম্বর ডিবি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বুশরা এ হত্যায় জড়িত না থাকলে তো অবশ্যই খুব খারাপ লাগবে। কিন্তু পরীক্ষার আগের রাতে বুশরার সঙ্গে ফারদিনের ৫-৬ ঘণ্টা কাটানোর কথা নয়। আর তাকে বাসার পাশে নামিয়ে দেয়ার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল ফারদিন। তাই আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে, বুশরা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত না।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না মনে করছেন তদন্তে কোনো সম্পৃক্ততা না পেলে বুশরার জামিন হওয়া উচিত।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি কিছু না পেয়ে থাকে, যতটুকু আমি পত্রপত্রিকায় পড়েছি, তার বিরুদ্ধে স্পেসিফিক এলিগেশন এনেছেন ফারদিনের বাবা। তার এলিগেশন হলো, সে (বুশরা) তার ছেলের সঙ্গে ছিল, সে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যেটা এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। এ পর্যায়ে এসে একটা মেয়ের জামিন হওয়া উচিত। এটা হলো আমার অপিনিয়ন।’

এ বিভাগের আরো খবর