প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফরে দেশটির সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়াও ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে। এসব বিষয় আগামী এক থেকে দুই দিনের মধ্যে চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই সফরকালে সাতটি চুক্তি ও এমওইউ নিয়ে আমরা কাজ করছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লেটার অফ ইনটেন্ড অন ডিফেন্স কোঅপারেশন। এই সাতটির মধ্যে এক/দুটি একটু এদিক-ওদিক হতে পারে।’
সচিব বলেন, “এবারের ভিজিটের একটি ইন্টারেস্টিং দিক হলো জাপানের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্কটা ছিল ‘কমপ্রেহেনসিভ রিলেশনশিপ বা পার্টনারশিপ’, সেটিকে আমরা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপে রূপান্তর করতে চাই। আর স্ট্র্যাটেজিক রিলেশনশিপ করতে হলে ডিফেন্স কোঅপারেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট।
“আরও বেশ কিছু ইস্যু ও কম্পোনেন্ট আছে। সেগুলো নিয়েও কাজ হবে, তবে সময় খুব কম ছিল। সে জন্য আমরা লেটার অফ ইনটেন্ড করছি। জেনারেল একটা ইস্যু। জাস্ট এতে কী কী থাকতে পারে, সেগুলো উল্লেখ করা হবে। এটাকে কেন্দ্র করে বা ব্যবহার করে আগামীতে আরও কী কী হতে পারে, তা নিয়ে ডিটেইলড আলোচনা হবে। তারপর হয়তো এগ্রিমেন্ট সাইন হবে দুই দেশের মধ্যে।”
পররাষ্ট্রসচিব জানান, প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে সঙ্গী হবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। এ ছাড়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও একটি শক্তিশালী ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল সফরসঙ্গী হবেন। কাল-পরশুর মধ্যে সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে যাবে।
অন্যান্য চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সম্পর্কে সচিব বলেন, ‘জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের যে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা পিটিএ সাইন হবে, সেটা করার আগে ওদের ভাষায় কম্প্রিহেনসিভ একটা কিছু হবে। সেপার মতো আরকি। এটা করার আগে একটা স্টাডি হবে। তারই একটা এমইইউ হবে এবার।
‘তারপর তাদের নিয়ম অনুযায়ী স্টেপ বাই স্টেপ যেতে হবে। সেটাও হবে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে যে কোঅপারেশনগুলো আছে, যেমন এগ্রিকালচার, ট্রেড, ইনভেস্টমেন্ট…ইনভেস্টমেন্ট একটি বড় ইস্যু হবে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘৩০ নভেম্বর সকাল থেকে অনেকগুলো ইস্যু-ইভেন্ট এনগেজমেন্ট আছে। বাংলাদেশ থেকে আমাদের বেজা, বিডা, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ, তারাও বড় প্রোগ্রাম করবে। জেট্রোও তাদের সহযোগিতা করবে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যে জাপানি ইনভেস্টমেন্ট এরিয়া হচ্ছে, সেখানে যে ইনভেস্টররা আছেন, তাদের কয়েকজন সিইও দেখা করবেন। আরও কয়েকটি বড় হাউসের সিইওসহ অনেকেই হয়তো দেখা করবেন।
‘জাপানের বড় বড় বিজনেস হাউসের কয়েকজন সিইও, যেমন: ইউনিক্লোর ইনাই সানের সঙ্গেও সাক্ষতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কম্প্রিহেনসিভ রিলেশনশিপের সঙ্গে এবার স্ট্র্যাটেজিক রিলেশনশিপও শুরু হবে।’
সচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আলোচনা হবে। এগুলো তো রাজনৈতিক ইস্যু। এগুলো আমরা সবসময়ই চাই। মিয়ানমারের সঙ্গে জাপানের একটা বেশ ভালো যোগাযোগ আছে।
‘এখন অবশ্য সামরিক সরকার আসার পর সে ক্ষেত্রে একটু ভাটা পড়েছে। তারপরও তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক আছে। সেটা কাজে লাগিয়ে রিপার্টিশানের বিষয়টি আমরা বলব।’
জাপানের ‘বিগবি’ বা বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ নিয়ে চীন-জাপান দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব কোনো কিছুতে আমরা যাব না। জাপানের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক অনেক পুরোনো। আমাদের মাতারবাড়ী ডিপ সিকেন্দ্রিক যে ইনভেস্টমেন্ট সম্ভাবনা আছে, সেখানে তারা কাজ করতে চাইলে আমরা স্বাগত জানাব।
‘তাতে কে কী মাইন্ড করল না করল, তা দেখতে গেলে তো আমরা কাজই করতে পারব না। আমরা এখানে অনেক বড় সম্ভাবনা দেখছি। নেপাল, ভুটান ও নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়ার সঙ্গে আমরা যে সম্ভাবনার কথা ভাবি, তা এখানকার অবকাঠামো ইনভেস্টমেন্টের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে জাপান এখানে অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করলে আমরা অনেকটা লাভবান হব।’
মাসুদ বলেন, ‘এ ছাড়া তাদের অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্প তো পাইপলাইনে আছে। সেগুলো চূড়ান্ত করে হয়তো ইআরডি তাদের সামনে কিছু উপস্থাপন করবে। এ নিয়ে আমরা মঙ্গলবার বসব।’