বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানুষ কষ্ট পায় এমন কিছু করবেন না, ব্যবসায়ীদের প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২০ নভেম্বর, ২০২২ ১৩:০৫

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনও আমি বলতে পারি যে আমরা অন্তত অত খারাপ অবস্থায় নেই। কিন্তু আমাদের সেদিকে…যারা আমাদের এখানে শিল্পপতিরা আছেন অনুরোধ করব, যার যার ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে অন্তত নিজের দেশের মানুষের চাহিদাটা পূরণ করবার প্রচেষ্টা আপনারা নেবেন।’

দেশের মানুষ কষ্ট পায় ব্যবসার জন্য এমন কিছু না করতে ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘এমন কিছু করবেন না, যাতে মানুষ কষ্ট পায় বা মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ বিশ্বব্যাপী এখন খাদ্যের অভাব। এ জন্য আমরা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

গণভবন থেকে রোববার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৫০টি শিল্প অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এদিন গণভবন প্রান্ত থেকে অনলাইন মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈশ্বিক মন্দার এই সময়ে বাংলাদেশ খারাপ অবস্থায় নেই বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্দার ছোবল থেকে দেশের সুরক্ষায় কৃষির পাশাপাশি শিল্প উৎপাদন বাড়াতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে মানুষের কল্যাণে কাজ করলে ব্যবসায়ীদের সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারির অর্থনৈতিক ধাক্কাটা বিশ্বের অন্য সব দেশের মতো বাংলাদেশেও লেগেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা যাতে অব্যাহত থাকে, সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এরও পর আসলো মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং স্যাংশন, কাউন্টার স্যাংশন। এই স্যাংশনের ফলে আমাদের ক্রয়ের সুযোগটা অনেক কমে গেছে। আমরা যেসব জিনিস বাইরে থেকে আমদানি করি, সেগুলোর যেমন দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, পরিবহন খরচ আরও বেড়ে গেছে।

‘যার ফলে অনেক দেশ আজকে, আপনারা দেখেছেন যে অর্থনৈতিক মন্দা নিজেরাই ঘোষণা দিয়ে গেছে, ইকোনমিক রিসেশনে ভুগছে। বাংলাদেশ এখনও আমি বলতে পারি যে আমরা অন্তত অত খারাপ অবস্থায় নেই। কিন্তু আমাদের সেদিকে…যারা আমাদের এখানে শিল্পপতিরা আছেন অনুরোধ করব, যার যার ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে অন্তত নিজের দেশের মানুষের চাহিদাটা পূরণ করবার প্রচেষ্টা আপনারা নেবেন।’

ব্যবসায়ীদের ব্যবসাবান্ধব নানা সুযোগ-সুবিধা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে বলেও জানান বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এখন আর হাওয়া ভবন নেই যে আপনাদের কোনো কাজ পেতে হাওয়া ভবনের পাওনা বোঝাতে হয় বা এখানে-ওখানে ছোটাছুটি করতে হয়। আমরা একটা শৃঙ্খলার মধ্যে দেশকে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। কাজেই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। সেই ব্যবসার ক্ষেত্রটা প্রস্তুত করা সুযোগ-সুবিধা দেয়া, সেটা কিন্তু আমরা করে দিচ্ছি সব ধরনের।’

বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা, আঞ্চলিক যোগাযোগ, দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিশাল বাজারের প্রসঙ্গটি তুলে ধরে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এখন থেকে যে দেশ আসবে, আমরা তাদের জন্য আলাদা জায়গা দেব। যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি। পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলে একেবারে অল্প সময়ে যোগাযোগব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’

ভবিষ্যতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেনেসড়কপথের পাশাপাশি নৌপথ, রেলপথ, আকাশপথের উন্নয়নেও সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন আমরা করেছি। তবে এটা ছয় লেন করে দিলেই ভালো হতো। আগামী দিনে সেটা আরও উন্নত করে দেব। সেই আশা আমাদের আছে।

‘ঢাকা থেকে যাতে আরও অল্প সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে রেলে পৌঁছানো যায়, তাই নতুন একটা রেললাইনের নতুন একটা অ্যালাইনমেন্টও আমরা চিন্তা করছি, সেটা আমরা করব। করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থনৈতিক যে চাপটা আমাদের ওপর আছে এটা কমে গেলেই এ কাজগুলো আমরা করতে পারব। যেটা আমাদের আরও সুবিধা হবে।’

দেশকে আরও এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে এটাই বলব, যেখানে শিল্পাঞ্চল হচ্ছে সেখানকার, সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিচ্ছি। যেমন অগ্নি নির্বাপণ, বর্জ্য ব্যববস্থাপনা বা সুপেয় পানির ব্যবস্থা-সবকিছু কিন্তু আমরা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা, তারাও সক্রিয়ভাবে সেখানে কাজ করছে, অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।’

মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরিতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সেই চিন্তাও আমাদের আছে। এখান থেকে সোজা মেরিন ড্রাইভ হবে। আমাদের যে বিশাল সমুদ্র, এই সমুদ্রকেও যেন মানুষ উপভোগ করতে পারবে আবার এই সমুদ্র আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পক্ষে অনেক অর্জন করতে পারবে।’

‘নিজেদের শিল্প ব্যবসা গড়ে তোলেন’চাকরির পেছনে না ঘুরে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘নিজেরা নিজেদের শিল্প ব্যবসা গড়ে তোলেন। নিজেরা অন্য লোকের চাকরির সুযোগ করে দেন। নিজের মাস্টার নিজেই হোন, আমাদের যুবসমাজকে এটাই আমি আহ্বান করব।’

টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কৃষিপ্রধান অর্থনীতি। কিন্তু শিল্পায়ন ছাড়া একটা দেশের উন্নতি হতে পারে না, কর্মসংস্থান তৈরি হয় না। আমাদের কৃষিও যেমন অব্যাহত রাখতে হবে, পাশাপাশি আমাদের শিল্পায়নও করতে হবে। সেই কথা চিন্তা করে আমরা বেসরকারি খাতকে যেমন সমস্ত সেক্টরগুলো উন্মুক্ত করে দিই। পাশাপাশি তাদের উৎসাহিত করা, সেই ব্যবস্থাটাও আমার নিই। সেই সঙ্গে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও আমরা বিশেষ দৃষ্টি দিই। কারণ, খাদ্য হচ্ছে মানুষের সব থেকে বড় চাহিদা। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি।’

টানা তিন মেয়াদে সরকারে থাকার কারণে দেশে কর্মসংস্থান, উৎপাদন, রপ্তানি, মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান।

শিল্পায়ন শুধু একটি অঞ্চলভিত্তিক না, প্রতিটি এলাকায়

কৃষির পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে শিল্পায়নের ওপর জোর দেয়া হলেও যেখানে সেখানে কারখানা তৈরি করে ফসলি জমি নষ্ট করতে দেয়া হবে না বলে ফের জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘শিল্পায়নটা শুধু বাংলাদেশের একটা অঞ্চলভিত্তিক না, প্রতিটি এলাকায় যাতে হতে পারে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। শুধু তাই না, আমার কৃষিজমি বাঁচাতে হবে। কারণ আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের খাবার দিতে হবে। কৃষি নিয়ে গবেষণা করছি। গবেষণা করে খাদ্য উৎপাদন আমরা বৃদ্ধি করছি। সেটাও যেমন আমরা করতে পারছি, তাই খাদ্য উৎপাদন আমাদের যেমন অব্যাহত রাখতে হবে, পাশাপাশি আমাদের শিল্পাঞ্চলও করতে হবে।

‘সেজন্য যেখানে সেখানে যাতে শিল্প না গড়ে ওঠে। কারণ আমি দেখেছিলাম, যে যেখানে খুশি, হয়তো ভালো ধানক্ষেত তিনটা ফসল হয়, সেখানে একটা ইন্ডাস্ট্রি করে তারপর দাবি করত বিদ্যুৎ দেন, গ্যাস দেন, পানি দেন, ড্রেনেজ, এটা সেটা। সেটা সম্ভব না। সেকারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখানে সেখানে কেউ শিল্প গড়তে পারবে না। কৃষি জমি, তিন ফসলি জমি কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না।

তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি যে অঞ্চলে শিল্প গড়ে ওঠবে যারা জমি দেবে, যাদের কাছ থেকে জমি কিনবেন, অন্তত তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্যই আপনাদের এই বিষয়গুলোতে দৃষ্টি দিতে হবে। সেই সঙ্গে যেসব শ্রমিকরা কাজ করবেন, তাদের ভালো মন্দের দিকেও দেখতে হবে। তাদের জন্য ভালো আবাসন ব্যবস্থা করা, তাদের পরিবারের সুযোগ সুবিধা দেখতে হবে।’

আর্থসামাজিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো গেলে নিজস্ব বাজার তৈরি হবে বলে মনে করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু বাইরেই রপ্তানি করব সেই চিন্তা করলে হবে না। দেশের মানুষের যদি ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, আমাদের দেশের অভ্যন্তরে যদি বাজার সৃষ্টি হয়, তাহলে শিল্প আরও বেশি লাভবান হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আমরা ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছি।’

নিজস্ব শিল্প গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়া এবং দেশি-বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতেই সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাই সমগ্র বাংলাদেশে আমরা ইতোমধ্যে ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করবার মতো জমি আমরা ঠিক করে রেখে দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে বিনিয়োগ আসবে।’

অর্ধশত শিল্প অবকাঠামো উদ্বোধন ও ভিত স্থাপন১৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক উৎপাদন এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মিত ৭টি অবকাঠামোর উদ্বোধন, ২৯টি শিল্প-কারখানার ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্ণফুলী ড্রাই ডক এসইজেড, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল, জামালপুরের জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, কক্সবাজারের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া হোসেন্দি অর্থনৈতিক অঞ্চলে এসব অবকাঠামো ও শিল্পগুলোর উদ্বোধন ও ভিত্তি স্থাপন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যুদ্ধকালীন অবস্থা, সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা বা ইকোনমিক রিসেশন, তার মধ্যেও আমাদের যে শিল্পায়ন হচ্ছে এবং একইসঙ্গে আজকে ৫০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারছি এটা একটা বিরাট পাওনা বলে আমি মনে করি।’

এ বিভাগের আরো খবর