বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গফরগাঁওয়ের দুর্নাম ঘোচাতে নান্দনিক সড়কচিত্র

  •    
  • ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:৫৬

গফরগাঁওয়ের দুর্নাম ঘোচাতে মাঠে নেমেছেন একদল চিত্রশিল্পী। তারা আঁকছেন নান্দনিক সড়কচিত্র। এটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী রুহুল আমিন কাজল।

চুরি-ডাকাতিসহ নানা কারণে একসময় আতঙ্কের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা। বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে চলাচল করা ট্রেনগুলোতে গফরগাঁওয়ে এসে ঘটত চুরি-ডাকাতির ঘটনা। এ কারণে ট্রেনযাত্রীদের মনে একটা ভীতি ছিল অনেক বছর ধরে। ফলে এক ধরনের নেতিবাচক পরিচিতি পেয়েছে এ জনপদ।

গফরগাঁও নিয়ে মানুষের এ বদ্ধমূল ধারণা কাটাতে মাঠে নেমেছেন একদল চিত্রশিল্পী। সড়কে তারা ফুটিয়ে তুলছেন নান্দনিক চিত্রশালা।

এটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী রুহুল আমিন কাজল। আর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল।

সড়কে ক্যানভাস করে ছবি এঁকে বিশ্বজুড়েই সাড়া ফেলেছেন এ উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের চিত্রশিল্পী রুহুল আমিন কাজল। তিনি ইউরোপের নানান দেশে ছবি এঁকেছেন। ১৯৯৪ সালে সুইডেনে কার্নিভালে ট্রাফিক আর্ট (সড়কচিত্র) করে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন।

কাজলের ‘কলোনি’ সিরিজের কাজগুলো সমাদৃত হয়েছে। ‘ডেমোক্রেজি, কিলিজিয়ন, ইভিলাইজেশন’ শিরোনামে তিনি নতুন নতুন শব্দ তৈরি করেছেন। ‘ট্রাফিক আর্ট’ যার বাংলায় অর্থ হলো ‘চলার পথে কলার কথা।’ নিজ জন্মভূমিতে শিল্প, নান্দনিকতা ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে তিনি সড়কচিত্রে উদ্যোগী হয়েছেন।

উপজেলার এশিয়ান হাইওয়ের ঢালিবাড়ী মোড়ে সড়কের পাশে বিভিন্ন চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন রুহুল আমিন কাজল। তার সহযোগী হিসেবে আছেন আরেক চিত্রশিল্পী উপজেলার গফরগাঁও ইউনিয়নের মহিরখারুয়া গ্রামের জ ই সুমন। এ ছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ গফরগাঁওয়ের চর এলাকার পাঁচ তরুণ সার্বক্ষণিকভাবে এ কাজে সহযোগিতা করছেন।

সড়ক চিত্রশিল্পটি দেখতে আসা আসাদুল হক নামের একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জামালপুর সদর থেকে গফরগাঁও বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। পরে জানতে পারি রংতুলির আঁচড়ে সড়কে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসে বেশ ভালো সময় উপভোগ করেছি। মনে হচ্ছে সড়কজুড়ে জীবন্ত ছবি।’

মইনুল হাসান নামের আরেকজন বলেন, ‘এসব চিত্রকর্ম মনোমুগ্ধকর। বাচ্চারা খুবই আনন্দ পায়। সে জন্য গফরগাঁও পৌর এলাকা থেকে ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। প্রতিটি সড়কে এমন চিত্র ফুটিয়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।’

চিত্রশিল্পী রুহুল আমিন কাজলের স্বপ্ন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গফরগাঁও উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও দেয়ালজুড়ে আঁকা হবে এমন ছবি।

তিনি বলেন, ‘যারা আগে গফরগাঁও আসার সময় ট্রেনের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিতেন, তারা ছবি দেখতে খুলে দেবেন ট্রেনের জানালা। গফরগাঁও শহরে ঢুকে দেখবেন, দেয়ালে দেয়ালে শিল্পের ছোঁয়া। ক্রমে ছবির খবর ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশের মানুষের কাছে। গফরগাঁও হয়ে উঠবে দেয়ালচিত্রের শহর।’

রুহুল আমিন নিউজবাংলাকে জানান, সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেলের কাছে তিনি উপস্থাপন করেন সড়কে চিত্র আঁকার পরিকল্পনা। শুনে সংসদ সদস্য পৃষ্ঠপোষকতা করতে সম্মতি দেন। তবে কী আঁকা হবে, তা নিয়ে তিনি কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করেননি। অক্টোবরের মাঝামাঝিতে শুরু হয়ে কাজটি ভালোভাবে এগোচ্ছে।

রুহুল আমিন কাজল জানান, ‘লোকজ সুন্দর’ শিরোনামে গফরগাঁও সড়কে যে ছবিগুলো আঁকা হচ্ছে, সেগুলো বাতাসে জীবন্ত হয়ে দোল খাবে। মানুষের মনে ছবিগুলো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, এমন স্বপ্ন নিয়েই ছবি আঁকার কাজটি করা হয়েছে। এ ছাড়া গফরগাঁওয়ের নতুন নতুন প্রজন্ম জানবে, তারা ছবির জনপদের মানুষ।’

রুহুল আমিন আরও বলেন, ‘আপাতত সড়কের চিত্রকর্ম শেষ করে চলে যাব ডেনমার্কে। পরে আবার এসে করা হবে দেয়ালচিত্রের কাজ। তখন মুক্তিযুদ্ধের কিছু ছবি আঁকা হবে। গফরগাঁও ছাড়া দেশের অন্য কোনো স্থানে এমন চিত্রকর্মের কাজ কেউ করতে চাইলে সহযোগিতা করব।’

আরেক চিত্রশিল্পী জ ই সুমন বলেন, ‘আমি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ড্রয়িং পেইন্টিংয়ে অনার্স মাস্টার করে ঢাকায় বেশ কিছুদিন কাজ করেছি। আমাদের মতো সবাই যদি নিজ জন্মস্থান ছেড়ে বাইরে চলে যায়, তাহলে নিজ এলাকার উন্নয়নের কাজ কে করবে? এসব চিন্তা করেই নিজ এলাকায় কাজ শুরু করেছি এবং দেশব্যাপী আমরা এই কাজ করব বলে চিন্তা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন শেখার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটা কাজল ভাইয়ের পছন্দ হয়েছে। তিনি আমাদের সহায়তা করবেন।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী রুহুল আমিন কাজল সড়কে চিত্রাঙ্কন আকার আগ্রহ প্রকাশ করলে পৃষ্ঠপোষকতা করার কথা জানাই। আসলে তার এমন উদ্যোগ আমার ভালো লেগেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন ভিড় করছে ওই সড়কের পাশে। আমিও দৃষ্টিনন্দন চিত্রাঙ্কন দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর