সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের কোনো শঙ্কা দেখছে না বলে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাককে জানিয়েছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডব্লিউএফপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডমেনিকো স্কালপেলি।
বিষয়টি রাজনৈতিক বলে সেই প্রতিনিধি সরাসরি গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি। তবে বরাত দিয়ে মন্ত্রী গণমাধ্যমকে এ কথা বলতে পারেন বলে অনুমতি দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ডব্লিউএফপির প্রতিনিধি দল।
তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন আমন কাটা চলছে। তিনি (ডমেনিকো) আমাকে বলেছেন যে, তাদের কাছ তথ্য আছে, কোনো ক্রমেই বাংলাদেশে খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষ হওয়ার সামান্যতম আশঙ্কা নেই।
‘তবে যেহেতু এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যু তাই তিনি এটা নিয়ে সরাসরি কথা বলবে না। আমি জানতে চেয়েছিলাম, তাকে রেফার করতে পারব কিনা। তিনি সম্মতি দিয়েছেন।’
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ডব্লিউএফপি দেশে দেশে সংকটের আশঙ্কা করছে, এমনকি দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসও আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নানা সময় বিশ্বে দুর্ভিক্ষ আসছে জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন, যেটি নিয়ে রাজনৈতিক বাদনুবাদ চলছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন মাল্টিলেটারাল ডোনার অনুমান করছে পৃথিবীতে একটি খাদ্য সংকট হওয়ার আশঙ্কা আছে অতিসত্ত্বর। কাজেই এটাকে বিবেচনায় নিয়েই সরকার কাজ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটিটিভ আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সংকটের কথা অনেকেই বলছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে তারা কীভাবে দেখছে এবং কীভাবে ভবিষ্যতে এখানে তারা কাজ করবে, এসব অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
স্বাধীনতার পর থেকেই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বিডব্লিউএফপি বাংলাদেশকে সহযোগিতা করলেও এখন সামান্য সাহায্যই দেয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত ১৫ বা ১২-১৩ বছর ধরে নেই নাই।…ইউএসএইড বছরে এক লাখ টনের মতো গম আমাদের দেয়। এটা ছাড়া বিদেশ থেকে আমরা কোনো খাদ্য সহযোগিতা বিদেশ থেকে গ্রহণ করি নাই।’
তবে গত ছয় বছর ধরে রোহিঙ্গাদের জন্য যে খাদ্য প্রয়োজন, সেটিও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মাধ্যমেই দেয়া হয় বলে মন্ত্রী জানান
‘এই মুহূর্তে খাদ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা নেই’
মন্ত্রী গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হওয়ার দিন সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা আর চিনির দাম কেজিতে ১৩ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। তবে রাজ্জাক দাবি করলেন, এই মুহূর্তে দেশে খাদ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা নেই।
গত তিন চার দিনে শীতকালীন সবজির দাম অর্ধেক হয়ে গেছে দাবি করে তিনি এও বলেছেন, আগামীতে দাম আরও কমে আসবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যের দাম কমেছে বলেই মূদ্রাস্থীতি গত মাসে কমে এসেছে। তবে আমি মনে করি এখন আমনের মৌসুম, ধান কাটার মাস, দাম আরও কমা উচিত ছিল।
‘আমি বলি, গবিব মানুষ আছে, তাদের কষ্ট হচ্ছে. সীমিত বা নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তবে টাকা নিয়ে খাবার কিনতে পারছে না এমন পরিস্থিতি হয়নি।’
শঙ্কার মধ্যেও এবার আমনের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘শ্রাবণ মাসে মাত্র একদিন বৃষ্টি হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম কৃষকরা হয়ত ধান লাগাতেই পারবে না, উৎপাদন কমে যাবে। কিন্তু এই প্রতিকুলতার মধ্যেও সেচ দিয়ে কৃষকরা ঠিকই ধান লাগিয়েছে। সবাই বলছে যে, স্মরণাতীতকালে সবচেয়ে ভালো ধান হয়েছে।’
বর্ষায় বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে আমন চাষ বেশি হয়েছে বলেও জানান রাজ্জাক। বলেন, ‘অনেক নিচু এলাকায় অন্য সময় ধান লাগানো যেত না। কারণ, বিলে পানি এসে যায়, ডুবে যায়। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় এই বিলের জমিতেও ধান লাগিয়েছে। তারা বলে যে অতীতে যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো আমন পাবে। আমাদের এবার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়েও ভালো ধান হয়েছে।’
আগামী মৌসুমের জন্য দেশে পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘আগামী আলু ও বোরোর জন্য যে সার দরকার আমাদের তা আছে। আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে।’
উৎপাদনে সমস্যা না থাকলেও দাম কি বণ্টন সমস্যা বাড়ছে- এমন প্রশ্নে রাজ্জাক বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুব বিব্রতকর। উৎপাদন আসলেই খুব ভালো হচ্ছে। এগুলোর সামাজিক-রাজনৈতিক কিছু সমস্যা আছে। আমি এটা অস্বীকার করবো না।
‘ক্যারিং খরচ, তারপর নানা ভোগান্তি তো আছেই। আমার মনে হয় আগামী ৬-৭ দিনে সারাদেশ শীতের সবজিতে ভরে যাবে এবং এগুলো কেনার মানুষ পাওয়া যাবে না। তিন চারদিনেই দাম অর্ধেক হয়ে গেছে।’
ডলার সংকটের কারণে খাদ্য আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে জবাব আসে, ‘আমরা বলেছি সার আমদানিতে কোনো সমস্যা তৈরি করা যাবে না। এটার পেমেন্ট স্মুথ করতে হবে।
‘খাদ্য আমদানিতে কিছু প্রভাব পড়ছে। গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পরিমাণ খাদ্য আমদানি হয়েছে। এই যে এত সংকটের কথা বলা হচ্ছে, এত কম আমদানির পরেও কি দেশে খাদ্য নিয়ে কোনো কথা আছে? হয়নি তো।’
বিদেশে উচ্চমূল্যের কারণে আমদানি করে ব্যবসায়ীদের লাভ হচ্ছে না বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘প্রায় আট শ প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২-৩ লাখ টনও আসেনি।’
চাঁদাবাজি বন্ধে কী করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা সম্মিলিতভাবে করতে হবে। ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। দেখা যায় দুয়েক দিন বন্ধ থাকে, আবার শুরু হয়। আমি বলছি না যে ব্যবস্থাপনায় একদম ঘাটতি নেই। কিন্তু অনেক কমে এসেছে।’