পড়াশোনা শেষ করে ভেটেনারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন। চার বছর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পর ২০১৪ সালের অক্টোবরে যোগ দিয়েছিলেন দুদকে।
কিন্তু দুদক থেকে চাকরি চলে যাওয়ায় ৮ বছর পর আবার সেই পুরোনো পেশায় ফিরে যাচ্ছেন তিনি। যদিও নিরাপত্তার স্বার্থে বর্তমান প্রতিষ্ঠানের নামটি তিনি গোপন রেখেছেন।
দুদকে থাকা অবস্থায় অনেকগুলো চাঞ্চল্যকর দুর্নীতির তদন্ত করে অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন শরীফ। কিন্তু তার বিরুদ্ধেই অভিযোগ দিয়ে দুদক কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়।
চাকরিচ্যুতির পর কোথাও চাকরি না পেয়ে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ভাইয়ের দোকানে কাজ শুরু করেছিলেন শরীফ। এই খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর দেশি-বিদেশি অন্তত ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ভালো বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেয় শরীফকে। তার মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দুই লাখ টাকার বেশি মাসিক বেতনেরও প্রস্তাব দিয়েছে।
এদিকে উচ্চ বেতনে এসব প্রতিষ্ঠানে যোগদান না করে দেশসেবামূলক কোনো কাজে জড়াতে চান বলে জানিয়েছিলেন শরীফ। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে সম্প্রতি একটি পশুফার্মে চিকিৎসক হিসেবে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
শরীফ বলেন, “আমি যাদের বিরুদ্ধে রেকর্ডভিত্তিক মামলার সুপারিশ করেছিলাম তারা আমার নামে বিভিন্ন সংস্থায় নামে-বেনামে মিথ্যা ও অভিনব অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে। আমি চেয়েছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার একজন একনিষ্ঠ সেবক হতে। অর্থাৎ অপরাধী যে-ই হোক তাকে ধরা হবে, বিচারের আওতায় আনা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
‘সে অনুযায়ী দুর্নীতি, মানবপাচার, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র চোরাচালান, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ছিল। কিন্তু ওই ধরনের কোনো সুযোগ না পাওয়ায় পরিবার ও শুভাকাঙ্খীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
‘যেসব সহৃদয়বান ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন আমাকে মূল্যায়ন করেছেন তাদের প্রতি সম্মান রেখেই ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে আমি ব্যক্তিগত প্রাপ্তির দিকে না তাকিয়ে আমার ডিসিপ্লিন ভেটেরিনারিতে ফিরে যেতে চাইছি। জীব প্রেমের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছি।
‘এ অবস্থায় শীঘ্রই একটি ভেটেরিনারি পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বেসরকারি ফার্মে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান শরীফ।”
এত কিছুর পরও প্রভাবশালী মহল পিছু ছাড়েনি উল্লেখ করে শরীফ বলেন, ‘আমি উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বিলাসিতায় নিজেকে জড়াতে চাই না। কারণ, আমার অপসারণের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমাকে চাকরিচ্যুতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হয়েছে। তাতেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে বড় কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সমীচীন মনে করছি না আমি। কারণ তারা আমার পেছনে লেগে থাকবেই।’
গণমাধ্যমকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতিজ্ঞতা জানিয়ে শরীফ বলেন, ‘আপনাদের এই ভালোবাসা ও সহমর্মিতাকে আমি ও আমার পরিবার আজীবন মনে রাখবো। আমার সততা ও ন্যায়নিষ্ঠতা বহাল রাখার জন্যই বোবা প্রাণীদের চিকিৎসা সেবায় মনোনিবেশ করতে যাচ্ছি। পাশাপাশি অন্যসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও কোম্পানি আমার দুর্দিনে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় তাদের প্রতি নিজেকে চির ঋণী মনে করছি। তারা আমার এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখবেন বলে আশা করছি।’
‘আমার যোগদান করা প্রতিষ্ঠানের নাম নিরাপত্তার স্বার্থে গোপন রাখছি।’
দায়িত্বরত অবস্থায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া, সরকারি প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে দুর্নীতিসহ নানা স্পর্শকাতর বিষয়ে অনুসন্ধান ও মামলা করে আলোচিত হয়েছিলেন দুদকের তখনকার সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন।
চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে দুদক। এরপর নানা সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় চাকরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। এক পর্যায়ে জীবিকার তাগিদে বড় ভাইয়ের পরামর্শে তিনি দোকান পরিচালনার দায়িত্ব নেন। চিকিৎসকের পরামর্শও তার এই কাজে যুক্ত হওয়ার একটি কারণ ছিল বলে জানান তিনি।