বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রতারণা করে বিপুল বিত্তের মালিক, অবশেষে ধরা

  •    
  • ৮ নভেম্বর, ২০২২ ২৩:১১

প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের প্রটোকল অফিসার পরিচয়ে বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজিসহ নানামুখী প্রতারণার মাধ্যমে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে হাতিয়েছেন বিপুল অর্থ। অবশেষে এনএসআই ও র‍্যাবের জালে সহযোগীসহ ধরা পড়েছেন চক্রের হোতা।

প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যের প্রটোকল অফিসার পরিচয়ে বদলি বাণিজ্য, টেন্ডারবাজিসহ নানামুখী প্রতারণার মাধ্যমে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ চক্রের হোতাসহ দুই প্রতারক গ্রেপ্তার হয়েছে। তারা হলেন বগুড়ার শিবগঞ্জের হরিদাস চন্দ্র তরনী ওরফে তাওহীদ ও ময়মনসিংহের ত্রিশালের ইমরান মেহেদী হাসান।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও র‍্যাবের যৌথ অভিযানে সোমবার রাজধানীর বনানী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ৪টি মোবাইল, জালিয়াতিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কাগজপত্র ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এডিট করা ভুয়া ছবি।

মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, তাওহীদ ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার একটি ছবি এডিট করে তার ওয়ালপেপারে সংযুক্ত করেন। তখন থেকেই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে কীভাবে অর্থ উপার্জন করা যায় তার ফন্দি-ফিকির করতে থাকেন তিনি। ২০১৯ সালে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ির পরিচয় ব্যবহার করে তিনি ময়মনসিংহ এলাকায় প্রতারণার ভিত মজবুত করেন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হরিদাস ওরফে তাওহীদ প্রতারক চক্রের হোতা। তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় অবৈধ উপায়ে পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করেন। তার আত্মীয়ের মাধ্যমে সেখানকার পঞ্চায়েত প্রধানের কাছ থেকে কৌশলে একটি এতিম সার্টিফিকেট যোগাড় করেন এবং সেখানকার স্থানীয় একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ইলেক্ট্রনিক বিষয়ে দুই বছরের বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন তিনি।

২০১০ সালে বাংলাদেশে এসে রাজধানীর উত্তরায় পুরনো এসি কিনে মেরামত করে বিক্রির কাজ শুরু করেন হরিদাস। এ সময় উত্তরার একটি হাসপাতালের এসি মেরামতের বিষয়ে তার সঙ্গে চুক্তি হয়। ২০১৮ সালে একজন সবজি বিক্রেতার সঙ্গে সাবলেট বাসা ভাড়া নেন। ওই বাসায় থাকা অবস্থায় তার মেয়েকে বিয়ের জন্য ২০১৯ সালে তিনি ধর্মান্তরিত হন। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে হয়ে যান তাওহীদ।

শ্বশুরের পরিচয় ধরে প্রতারণার শুরু

র‍্যাব জানায়, তাওহীদ তার শ্বশুরের পরিচয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকায় কিছু জমি কেনেন। তার শ্বশুরের মাধ্যমে এলাকার লোকের সঙ্গে নিজেকে একজন বিত্তশালী লোক হিসেবে পরিচিত হন। পাশাপাশি প্রচার করতে থাকেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের প্রটোকল অফিসার। তখন দামি গাড়িতে চড়ে মাঝে মাঝে এলাকায় গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, গণ্যমান্য ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হন। বিভিন্নজনকে প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়ের সহায়তায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট পাইয়ে দেয়অর প্রস্তাব দেন। তাওহীদের ৫-৬ জন সহযোগী রয়েছে।

প্রতারণার টাকায় রিসোর্ট

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তাওহীদ প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকায় ২০১৯ সালে ফুলবাড়িয়া এলাকায় প্রায় এক বিঘা জমি কিনে ‘প্যারিস সুইমিংপুল এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক’ নামে একটি রিসোর্টের কাজ শুরু করেন। কাজ শুরু হলে বিনিয়োগের প্রলোভনে পড়ে আরও অনেকেই তাকে লাখ লাখ টাকা দেন।

২০২০ সালে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে রিসোর্টের কাজ শেষ হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

তাওহীদ বিত্তশালী অনেককে তার রিসোর্টে আমন্ত্রণ জানাতে থাকেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এডিট করা ছবি দেখিয়ে তার বিভিন্ন প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করেন। এভাবে তিনি অনেকের কাছ থেকেই অর্থ আদায় করেন।

এই প্রতারক এ পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে প্যারিস সুইমিংপুল এন্টারটেইনমেন্ট রিসোর্টসহ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকায় নামে-বেনামে অনেকটা জমি কিনেছেন। এছাড়াও একাধিক ব্যাংকে তার নামে-বেনামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

যেভাবে ধরা

র‍্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার ইমরান মেহেদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাশিয়ার। একাধিক অপকর্মের তথ্য পেয়ে তাকে বিভাগীয় শহর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। এরপর যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যম ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে বদলি বাতিলের জন্য তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেন।

ইমরান মেহেদী তার বদলি আবেদনের একটি কপি তাওহীদকে দেখান। তারপর তারা দুজনে ওই কপির ওপর প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের একজন সদস্যের নাম লিখে ভুয়া সিল দিয়ে একটি ভুয়া ডিও লেটার তৈরি করেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মোবাইলে অ্যাপসের মাধ্যমে সেটি পাঠিয়ে দ্রুত বদলির আদেশ বাতিল করে আগের পদে বহালের জন্য সুপারিশ করা হয়।

ডিও লেটারটি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) কাছে অভিযোগ করে। এই অভিযোগের ছায়া-তদন্তে ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে।

তাওহীদ ২০১৪ সাল থেকে প্রতারণা করে এলেও এতদিন কেন ধরা পড়েননি- এমন প্রশ্নের র‍্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। সম্প্রতি এনএসআই-এর তদন্তে বেশকিছু তথ্য বেরিয়ে আসে। পাশাপাশি তথ্য বেরিয়ে আসে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিভিন্ন পদে চাকরি, পদোন্নতি ও বদলির বিষয়ে আশ্বস্ত করে ভুয়া ডিও লেটার ও ভুয়া সিল ব্যবহার করে একাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই তাওহীদ।

প্রতারককে টাকা দেয়া হয় বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য। এটাও এক ধরনের ক্রাইম। যারা টাকা দিয়েছেন তাদেরকেও আইনের আওতায় আো হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘প্রতারণার মাধ্যমে কিংবা অর্থ দিয়ে কেউ চাকরিতে যোগ দিয়ে থাকলে তাদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর