বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধর্ম অবমাননার মামলায় এখনও কারাগারে প্রীতম দাশ

  •    
  • ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ২২:৫৭

প্রীতমের ভাই পিয়াস দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছু মানুষ ধরেই নিয়েছে সে হয়ত অবমাননাকর কিছু করেছে, কিন্তু সে তো আসলে কিছু করেনি। একজনে লেখকের লেখা শেয়ার দিয়েছিল মাত্র।’

‘অনেক বড় বড় অপরাধী অপরাধ করে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। আর আমার ছেলে কিছু না করেও এতদিন ধরে জেলে। নিজেকে কীভাবে বুঝাবো, কীভাবে সান্ত্বনা দেব।’

কথাগুলো বলছিলেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পৃথীশ দাশ। পাকিস্তানি লেখক সাদত হোসেন মান্টোর একটি উক্তি ফেসবুকে পোস্ট করায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার প্রীতম দাশের বাবা তিনি।

স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী মাহবুব আলম ভুঁইয়ার করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলায় গত ৯ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় প্রীতমকে।

তার আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম নিউজবাংলাকে জানান, গ্রেপ্তারের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিচারিক আদালতে দুইবার ও হাইকোর্টে একবার জামিন চেয়েও পাওয়া যায়নি।

সবশেষ গত ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। আবারও আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রীতমের আইনজীবী।

প্রীতমের জামিন না হওয়ায় হতাশ মা-বাবা ও ভাই।

তার ভাই পিয়াস দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক দৌড়াদৌড়ি করেও জামিন হচ্ছে না। পারিবারিকভাবে সবাই ডিপ্রেশনে আছি। মিথ্যা একটি মামলা দিয়ে সামাজিকভাবেও হেয় করা হয়েছে। কারণ মানুষ তো জানেই না যে সে কি করছে বা লিখছে।

‘কিছু মানুষ ধরেই নিয়েছে সে হয়ত অবমাননাকর কিছু করেছে, কিন্তু সে তো আসলে কিছু করেনি। একজনে লেখকের লেখা শেয়ার দিয়েছিল মাত্র।’

তিনি জানান, এই মামলার কারণে অর্থনৈতিকভাবেও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবারটি।

প্রীতমের মা কনিকা দাশ বলেন, ‘মুখে ভাত নিতে পারি না। খাবারের সামনে বসলেই মনে হয় আমার ছেলে কী খাচ্ছে! যদি আমার ছেলে অন্যায় করত, মেনে নিতাম যে অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছে। কিন্তু কোনো কিছু না করে কেন সে এতদিন ধরে জেলে?’

মামলার তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীমঙ্গল থানার উপপরিদর্শক রাকিবুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রীতমের ফেসবুকের সে স্ট্যাটাসগুলোর স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে, আমরা আলামত হিসেবে পেয়েছি; তার ফরেনসিক রিপোর্ট ঢাকা থেকে এখনও আসেনি। সেটা আসলে তদন্ত এগোবে।’

যা ঘটেছিল

পাকিস্তানের জনপ্রিয় লেখক মান্টোর একটি উক্তি গত ৮ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট করেন প্রীতম। এর ঠিক আগের দিন ৭ জুলাই একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ‘নও পাকিস্তানি নও বাংলাদেশ’ শিরোনামের একটি লেখায় পাকিস্তানের দুর্দশার বর্ণনা করতে গিয়ে মান্টোর ওই উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন।

সেই লেখা থেকে নেয়া মান্টোর উদ্ধৃতি নিয়ে পোস্ট দেয়ার পর প্রীতমের বিরুদ্ধে ‘ইসলাম অবমাননার’ অভিযোগ তোলেন শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন। তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেই পোস্ট ভাইরাল হলে শ্রীমঙ্গলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

গত ৩১ আগস্ট প্রীতম দাশকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘শ্রীমঙ্গলের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা’। এরপর প্রীতমের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী মাহবুব আলম ভুঁইয়া।

সে মামলায় শ্রীমঙ্গল শহরের একটি বাড়ি থেকে প্রীতমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সে সময় চলা আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার কারণে তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে বলে এর আগে নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন প্রীতম।

তিনি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নামে একটি স্থানীয় সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সংগঠনটি চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছিল।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা দিদারুল ভুঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনারা জানেন যে... শ্রীমঙ্গলে যে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন হলো, সেটাতে সমর্থন জানাতে গিয়ে প্রীতম আওয়ামী সন্ত্রাসের শিকার হলো।

‘প্রথমত প্রীতম ও তার বন্ধুদের উপর হামলা হয়েছিল। এরপর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি করে তাদের উপর আরও বড় পরিসরে হামলার পরিকল্পনা করা হয়। এটা যখন ব্যর্থ হয়, তখন তাকে একটা সবচেয়ে নিবর্তনমূলক কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়।’

দিদারুল আরও বলেন, ‘এসবই ছিল খুবই পরিষ্কার। কারা এই ঘটনাগুলোর পেছনে দায়ি, সেটা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি আত্মসমালোচনামূলক বিবৃতিও দিয়েছিল। সারা দেশের মানুষ এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। এত কিছুর পরেও প্রীতম এখনও জেলে এবং হাইকোর্টও প্রীতমকে জামিন দিতে পারে নাই। এটা খুবই লজ্জাজনক।’

প্রীতমকে মুক্ত করতে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন দিদারুল।

চা-শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানানোয় হামলার শিকার হয়েছিলেন প্রীতম (বামে) ও তার সংগঠনের সদস্যরা। ছবি: ফেসবুক

প্রীতম দাশ গত ৩১ আগস্ট নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘চা-শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমাদের ডাকা সমাবেশে শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেনের নেতৃত্বে হামলা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আমি তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছিলাম। সে কারণে সে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার নামে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে উসকানি ছড়াচ্ছে।’

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ছাত্রলীগের মামলা করার ঘটনার সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের পরিচয়ে যারা এ কাজ করেছে তারা ছাত্রলীগকে অবমাননা করেছে। তারা ছাত্রলীগকে সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। এটা তো হতে পারে না। এরা এ কাজ করে আওয়ামী লীগের আদর্শকেও অবমাননা করেছে।’

নিজের লেখার একটি অংশ পোস্ট করে প্রীতম ‘ধর্ম অবমাননা’ মামলার আসামি হয়েছেন- এমন বিষয়টি নিয়ে ব্যথিত মুনতাসীর মামুন।

তিনি বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে লিখছি। আমার বিরোধীরাও আমার লেখায় অবমাননা পায়নি। এখন নব্য কিছু ছেলে যদি ধর্ম অবমাননা পায় সেখানে আমার কিছু বলার নেই। এভাবে চললে তো এরা বাংলাদেশে সব কথাতেই অবমাননা খুঁজে পাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর