বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দীর্ঘ যুদ্ধে আসতে পারে দুর্ভিক্ষ, বাড়াতে হবে খাদ্য উৎপাদন: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ১২ অক্টোবর, ২০২২ ১৩:৪৫

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার মাঝে একটা উদ্বেগ। ২০২৩ সালে সারা বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। খাদ্যমন্দা দেখা দিতে পারে। সবাই চিন্তিত। আমি উন্নত দেশগুলোর কথা বলছি। বাংলাদেশে আমাদের মাটি, মানুষ আছে। আমাদের এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে যাতে কোনো মতে এ রকম অবস্থা সৃষ্টি না হয়। আমাদের পণ্য আমরা উৎপাদন করব।’

কিছু দেশ নিজেদের অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই পরবর্তী বছরে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ যাতে দুর্ভিক্ষের কবলে না পড়ে সে জন্য এখন থেকে উদ্যোগ নিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বুধবার সকালে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ ও ১৪২৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

এ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৪৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।

করোনাভাইরাস মহামারি অভিঘাতের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বৈশ্বিক মন্দার প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলাপের ভিত্তিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার মাঝে একটা উদ্বেগ। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। খাদ্যমন্দা দেখা দিতে পারে। সবাই চিন্তিত। আমি উন্নত দেশগুলোর কথা বলছি। বাংলাদেশে আমাদের মাটি, মানুষ আছে। আমাদের এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে যাতে কোনো মতে এ রকম অবস্থা সৃষ্টি না হয়। আমাদের পণ্য আমরা উৎপাদন করব।’

যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ যুদ্ধ এত তাড়াতাড়ি থামবে বলে মনে হয় না। কারণ করোনাভাইরাসের সময় অস্ত্র বিক্রি করতে পারেনি। এখন যেসব দেশ অস্ত্র ব্যবসা করে তারাও লাভবান হয়, আর এ যুদ্ধ চালিয়ে রাখতে পারলে তো কিছু দেশ নিজেরা লাভবান হবে। কিন্তু সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’

নিজের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সে জন্য আমি আহ্বান জানিয়েছি, যুদ্ধ বন্ধ করেন। শিশুদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন, তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা নেন। আমি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেই আবেদনটাই করেছি। আমাদের দেশে যেহেতু আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, এখন আমাদের খাদ্য নিশ্চয়তা দিতে হবে। তার জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। জাতির পিতা যে কথা বলেছেন, এক ইঞ্চি জমি অনাবাদী থাকবে না।’

দুর্ভিক্ষের ঝাপ্টা যেন বাংলাদেশকে আঘাত করতে না পারে, সে জন্য নিজেদের পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ও জাতিসংঘের নেতৃত্বে আমরা এখন (পণ্য) কিনে আনতে পারব। তবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছি, চুক্তি করেছি। যেমন কানাডা থেকে যাতে আমরা গম আনতে পারি বা আমরা সার আনতে পারি।

‘এখন আমরা কিন্তু রাশিয়া থেকে, ইউক্রেন থেকে, বেলারুশ থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা সব পণ্য এখন আনতে পারব। যেটা জাতিসংঘের জেনারেল সেক্রেটারি একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তার যে চ্যাম্পিয়ন গ্রুপ, সেই গ্রুপে আমরা ছিলাম, আছি। সেভাবেই আমরা একটা ব্যবস্থা নিতে পেরেছি।’

পণ্য আমদানির পথ সুগম হলেও পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবহনের খরচও অতিরিক্ত বেড়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘তার পরও কৃষকদের ভর্তুকি কিন্তু আমরা অব্যাহত রেখেছি। কারণ আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা আমাকে পূরণ করতে হবে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য চাহিদা এটা কখনও কমবে না। খাদ্য চাহিদা বিশ্বে বাড়বে। আর এই যুদ্ধের কারণে অনেক দেশে যখন দুর্ভিক্ষ হবে, হয়তো আমাদেরকে তাদের খাদ্য সহযোগিতা পাঠাতে হবে। তাই উৎপাদনের দিকে যদি আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিই সেটা আরও ভালো হবে।’

খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্য সংরক্ষণকেও যথাযথ উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ আমরা উৎপাদন করতে পারি, কিন্তু এটা সংরক্ষণ করা যায় না বলে উৎসাহিত না কৃষক। আমাদের অন্যের কাছে নির্ভরশীল থাকতে হতো। আমরা তো কোনো ব্যাপারে নির্ভরশীল থাকতে চাই না। আজকে যখন আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি পেঁয়াজ উৎপাদনের, পেঁয়াজ উৎপাদনে কিন্তু আমরা যথেষ্ট সাফল্য আনতে পেরেছি। তৃতীয় স্থান অধিকার করেছি।

‘উৎপাদিত পেঁয়াজগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা যাতে হয়, সেদিকেও আমরা দৃষ্টি দিচ্ছি। বেসরকারি খাতকেও আমরা উৎসাহিত করছি। উৎপাদনই শুধু করব না, সেগুলো যেন আমরা সংরক্ষণও করতে পারি, সে ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।’

মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম উৎপাদনসহ খাদ্য উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু ভোজ্যতেলের ৯০ ভাগ আমাদের বাইরে থেকে আনতে হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, বাংলাদেশ আগে অনেক তেল নিজেরাই তৈরি করত। চীনা বাদাম লাগিয়ে তেল তৈরি করা স্থানীয়ভাবে বহুল প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

‘আমি মনে করি, স্থানীয় পর্যায়ে যেমন তেল উৎপাদন, পাশাপাশি নিজেদের ভোজ্যতেলটা পরের ওপর নির্ভরশীল না থেকে কিভাবে আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি সে পদক্ষেপটা আমাদের নিতে হবে। ইতোমধ্যে গবেষণার মাধ্যমে উন্নতমানের শস্যবীজ পেয়েছি। শস্যবীজ ছাড়াও অন্য যেসব তেল আন্তর্জাতিকভাবে অনেকে ব্যবহার করে, যেমন- সূর্যমুখী আছে, সয়াবিন আছে—আমাদের মাটি এত উর্বর, আমরা ইচ্ছা করলে কিন্তু করতে পারি। পরনির্ভরতা কমিয়ে আমাদের নিজেদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে হবে। সে ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। এটা আমরা করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি।’

দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই কারণে যে আমার কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয়। যত্রতত্র শিল্প যেন না গড়ে ওঠে। যত্রতত্র শিল্প গড়ে আমার কৃষিজমি নষ্ট করা হয়। সেটা যাতে কেউ করতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশব্যাপী আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি।’

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণেও জোর দিতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যে যে অঞ্চলে আমাদের বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে প্রক্রিয়াজাত করা, আমরা কিন্তু এই সব শিল্পাঞ্চলে কৃষিপণ্য বা খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াকরণ ইন্ডাস্ট্রি করতে পারি। সেগুলো আমরা নিজেদের দেশেও ব্যবহার করতে পারি, বিদেশেও রপ্তানি করতে পারি। সে ব্যবস্থাটা নিতে হবে। মাছ, মাংস, সবজি, তরি তরকারি আমরা উৎপাদন করি, সেগুলো প্রক্রিয়াজাত করা।’

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘যে অঞ্চলে যে জিনিসটা সব থেকে বেশি উৎপাদিত হচ্ছে, এটা কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে সিস্টেম আছে, কোন তরকারিটা কত টেম্পারেচারে ভালো থাকবে। আমাদের সেভাবে সংরক্ষণাগার গড়ে তুলতে হবে। যাতে পণ্যটা যখনই কৃষক তুলবে সঙ্গে সঙ্গে যেন বাজারজাত করতে পারে এবং সংরক্ষণ করতে পারে। সংরক্ষণ করলে এটা আমরা নিজেরাও ব্যবহার করতে পারব, রপ্তানিও করতে পারব। তার থেকে বড় কথা হলো বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন আমরা করতে পারব, যা আমাদের কাজে লাগে।’

এ জন্য তহবিল দিতেও সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরিবেশের কথা ভেবে পাট পণ্যের চাহিদা বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। কৃষি গবেষণার ওপর আরও জোর দিতে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর