বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সবজিতে শীত-গ্রীষ্মের ব্যবধান মুছে দিচ্ছে পলিনেট হাউস

  •    
  • ৯ অক্টোবর, ২০২২ ১৬:৫৪

‘হাউসে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, ব্লাক ডোরিন, রকমেলন, রঙিন তরমুজ, রঙিন ফুলকপি ও বাঁধাকপি, লেটুসসহ অন্যান্য সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, তেমনি আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে কৃষক। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন যে আলাদা সবজি, ফল ও ফুল চাষ হয়, তার সবই ১২ মাস পাওয়া যাবে।’

শীতকালীন সবজির জন্য আর অপেক্ষায় থাকতে হবে না শীতের, গ্রীষ্মকালীন বা বর্ষাকালীন সবজিও এভাবে পাওয়া যাবে যেকোনো সময়ে।

পলিনেট হাউস নামে এক চাষপদ্ধতিতে সম্ভব হচ্ছে এটি। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একডালা গ্রামে শহিদুল ইসলাম ও উল্লাপাড়া উপজেলার আরেকটি গ্রামের ফজলুল হক এই হাউস করে চাষ করছেন।

আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৫ শতক জমির ওপর এই হাউস স্থাপন করা হয়।

বর্তমানে শহিদুলের হাউসে গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, গাজর, মুলা ও ধনিয়ার আবাদ করা হচ্ছে। তবে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোস্তম আলী জানান, সেখানে যেকোনো মৌসুমে অন্য মৌসুমের সবজি বা ফুল চাষ করা সম্ভব।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘হাউসে উচ্চমূল্যের ফসল যেমন ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, ব্লাক ডোরিন, রকমেলন, রঙিন তরমুজ, রঙিন ফুলকপি ও বাঁধাকপি, লেটুসসহ অন্যান্য সবজির পাশাপাশি চারা উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে সবজি চাষে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, তেমনি আয়ের নতুন উৎসের সন্ধান পাবে কৃষক। সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন যে আলাদা সবজি, ফল ও ফুল চাষ হয়, তার সবই ১২ মাস পাওয়া যাবে।’

পলিনেট হাউস সব ঋতুতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে বলেই এটি সম্ভব বলে জানান তিনি।

এই হাউস তৈরি করা হয় নেট, পলি এবং লোহা বা বাঁশের অবকাঠামোতে। চারপাশে নেট গিয়ে ঘেরা হয়। আর উপরের অংশ পলিথিন বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ত্রিপল ব্যবহার করা হয়। ভেতরে যেসব সবজির আবাদ করা হবে, সেগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

আর এর ভেতরের অংশে চাষাবাদের জন্য পলিমাটি, ভরাট বালি, ছাই, গোবর সার, হাড়ের গুঁড়া, খৈলসহ নানা উপকরণ মিশ্রণে প্রস্তুত করা হয় চাষের জমি।

সেখানে পলিথিনের আচ্ছাদন ব্যবহার করা হয়। এতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশে বাধা পায় এবং অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসল অক্ষত থাকে।

জেলায় প্রথম এই হাউস তৈরি করেন প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম মিলন। তিনি নিউজবাংলাকে জানান, পলিনেট হাউস তৈরি করতে বিশেষ তাপমাত্রা সহনশীল বিশেষ পলিথিন ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী মেশিন লাগে। এর সঙ্গে জৈব সার আর নারিকেলের ছোবলা পচিয়ে বিশেষ উপাদান তৈরি করতে হয়।

এক বিঘা জমিতে এই হাউস করতে হলে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ হয়, যা দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে পলিনেটে ফসলের উৎপাদন ২০ শতাংশ বাড়ে পাশাপাশি পোকামাকড়ের আক্রমণ কমে ৭০ শতাংশ। প্রাথমিকভাবে খরচ কিছুটা বেশি হলেও পরে উৎপাদন খরচ কম হয় আর নিরাপদ ফসল উৎপাদন সহজ হয়।

পলিনেটে সুস্থ্য সবল চারা উৎপাদন করা যায় এবং উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন করে বেশি লাভবান হওয়া যায়।

কৃষি কর্মকর্তা রোস্তম আলী বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ সদর ও উল্লাপাড়ায় পলিনেট হাউস দেখে অন্যরা উৎসাহী হচ্ছেন। এখন আমরা এই চাষ পদ্ধতি পুরো জেলায় ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছি।

একডালা গ্রামের হাউসের মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে একটু শঙ্কায় ছিলাম, এই পদ্ধতিতে আবাদ করে লাভ হবে কি না। কিন্তু আবাদ শুরুর পর দেখি এ পদ্ধতি বেশ ভালো। সারা বছর এখানে বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফল ও ফুল চাষ করে আমরা লাভবান হতে পারব।

উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পলিনেট হাউস ভারী বৃষ্টি, তাপ, কীটপতঙ্গ, ভাইরাসজনিত রোগের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিরাপদ শাক-সবজি ফলমূলসহ কৃষি উৎপাদন করার এক আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কৃষক সারা বছর যেকোনো সবজি চাষ করতে পারবে।

‘এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজিগুলো যেমন সহজেই গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যায়। তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতির সুবিধা দেখে এলাকার অনেক কৃষকই এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠছে।’

এ বিভাগের আরো খবর