বিএনপি ও তাদের মিত্ররা রাজপথে আন্দোলনের নামে অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, রাজনীতি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সরকার সহনশীলতা দেখাচ্ছে। তবে এই সহনশীলতাকে দুর্বলতা ভাবার সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এলে তা প্রতিহত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এসব কথা বলেন।
ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয় সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপি পায়ে পা দিয়ে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। দলটি নির্বাচন সামনে রেখে অপতৎপরতায় লিপ্ত। এসব প্রতিহত করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের আছে। কিন্তু দেশ ও মানুষের কল্যাণ এবং উন্নতির কথা চিন্তা করে, রাজনীতির স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে সহনশীলতা দেখানো হচ্ছে। এই সহনশীলতাকে কেউ দুর্বলতা মনে করলে তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে।’
হানিফ বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক সহনশীলতা ও শিষ্টাচারে বিশ্বাস করি। তাই বলে এটা নয় যে আমাদের ওপর বার বার হামলা হবে আর আমরা বসে দেখব।’
‘মানবতার আলোকবর্তিকা বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটি। এ সময় গৃহহীন ও দুস্থদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
নেতাকর্মীদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘দেশ একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ের সম্মুখীন। গণতন্ত্র হুমকির মুখে। শান্তি আজ বিঘ্নিতপ্রায়। তারা (বিএনপি) যখন ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে, লাঠি নিয়ে রাস্তায় নেমে চ্যালেঞ্জ করে; তখন মনে রাখতে হবে তারা পায়ে পা দিয়ে দেশে অশান্তি তৈরি করতে চায়।
‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীদের মধ্যে ঐক্য। এই ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে একাত্তরে যেভাবে বিজয় অর্জন করেছি, ২০০৮ সালে ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জয়লাভ করেছি; তেমনিভাবে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ সব অপশক্তি যারা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, তাদের প্রতিহত করতে হবে।’
নানক বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা প্রশ্ন করব- লাঠিসোটা নিয়ে যে সভা-সমাবেশ করা হচ্ছে, সেই সভা-সমাবেশের অনুমতি কিভাবে পায়। জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানাই।’
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি হত্যা-খুনের রাজনীতি করে। তাদের মাথায় হত্যা-খুন, নাশকতা ছাড়া কিছু নেই। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেছেন হত্যার মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগ হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।
‘আওয়ামী লীগ টানা ১৪ বছর ক্ষমতায়। বিএনপির কেউ বলতে পারবে না যে তাদের ওপর হামলা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। তারা যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে গাড়িতে আগুন দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে, তখন হয়তো পুলিশ তাদের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।’
বিএনপি স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে হানিফ বলেন, ‘আপনাদের পূর্বপুরুষরা সবাই ছিল পাকিস্তানপন্থী। তারা একাত্তরে রাজাকার ছিল। বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব ও সংবিধানে তাদের কোনো আস্থা নেই। তারা এখন চায় বাংলাদেশকে পাকিস্তানে নিয়ে যেতে।
‘আমরা রাজাকারদের পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করে এখন শেখ হাসিনা নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। একাত্তরেই ফয়সালা হয়ে গেছে- এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলাদেশ। এটা রাজাকারের বাংলাদেশ নয়। কাজেই নতুন করে ফয়সালার কোনো দরকার নেই। আপনারা যারা এখনও রাজাকারের প্রেতাত্মা হিসেবে এই দেশকে আবার ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ বলে পেছনে নিয়ে যেতে চান সেই স্বপ্ন কখনও পূরণ হবে না।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।