অবশেষে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলল মিয়ানমার সরকারের ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্র চীন। ঢাকার দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে বলেছেন, ‘সীমান্তে যা হচ্ছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমি মনে করি এটি একটি আলোচনার বিষয়।’
সোমবার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব খুরশীদ আলমের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান চীনা দূত।
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের আগে ডাকা কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে দেশটি অনুপস্থিতি থেকে এড়িয়ে দিয়েছিল।
সীমান্তে মিয়ানমারের সামরিক তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত করতে ঢাকায় কর্মরত আশিয়ান বহির্ভূত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ডেকেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে তাতে অংশ নেননি চীনের রাষ্ট্রদূত লি জি মিং। চীনের এই সাড়া না দেয়ার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেয়নি ঢাকা।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সীমান্তে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘চীনা রাষ্ট্রদূত সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলেন। আমি তাকে সীমান্ত পরিস্থিতি অবহিত করেছি। মিয়ানমার তাদের খুব কাছের বন্ধু। মিয়ানমারকে বোঝানোর জন্য তাকে বলেছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কেও তাকে বলা হয়েছে।’
গত এক মাসে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে মিয়ানমারের একাধিক গোলা এসে পড়েছে। এতে আহত হওয়ার ঘটনাও আছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে চার দফা তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা। তলবে দেশটি দাবি করছে, এই গোলা তাদের সেনাবাহিনী নিক্ষেপ করছে না, আরাকান রাজ্যকে স্বাধীন করতে লড়াই করা সশন্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরসার গোলা এসব।
তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশে যেন এর প্রভাব না পড়ে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আলোচনার বিষয়ে লি জিমিং বলেন, ‘বন্ধুদের মধ্যে যে রকম কথা হয়, আমাদের মধ্যে সে রকম কথা হয়েছে। দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে।’
মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ডাকা বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে ব্যাখ্যাও চেন চীনা দূত। তিনি বলেন, চীনা জাতীয় দিবসের প্রস্তুতি নিয়ে দূতাবাস ব্যাস্ত থাকায় তারা দুর্ভাগ্যজনকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণ মেইল মিস করে। ফলে তারা ডাকে সাড়া দিতে পারেনি।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জি মিংকে জানিয়েছে বাংলাদেশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত ঢাকাকে আশ্বস্ত করেছেন, বিষয়টি নিয়ে বেইজিং নেইপিডোর সঙ্গে আলোচনা করবে।
‘আমাদের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওইদিন তিনি মিটিংয়ে ছিলেন না। আমরা সবাইকে অবহিত করেছি। বেইজিং এ বিষয়ে নেইপিডোর সঙ্গে আলোচনা করবে, এটা বলেছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’
প্রায় দেড়ঘণ্টার মতো ওই বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে খুরশীদ আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চায়না আগে থেকে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় ছিল। এটা যেন ত্বরান্বিত হয় সে ব্যাপারে বলেছি। ত্রিপক্ষীয় ইস্যু আগে। আমাদের ইস্যু তো সাম্প্রতিক ইস্যু না। মূলত হলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যত দ্রুত শুরু করা যায়। আমরা তো এখনও শুরু করতে পারিনি। এ ব্যাপারে তারা যেহেতু আগে একটা ইনিশিয়েটিভ নিয়েছিল, সেই ইনিশিয়েটিভের ব্যাপারে আমরা অনুরোধ করেছি, বলেছি আপনারা ইনিশিয়েটিভ নেন।
‘এখানকার পরিস্থিতি ভালো না। যাতে প্রত্যাবাসনটা শুরু হয় এ ব্যাপারে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। তারা (চীন) রাখাইনে ঘরবাড়ি বানিয়েছে, যেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে গেলে সেখানে থাকতে পারে। ওই জায়গার সেইফটি এন্ড সিকিউরিটির ওপর এটা নির্ভর করছে।’
সীমান্তে চলমান পরিস্থিতির মধ্যে প্রত্যাবাসন সম্ভব কিনা- প্রশ্নের জবাবে খুরশেদ আলম বলেন, ‘যে জায়গায় নিয়ে যাবে সেখানে কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না।’
চীনের না থাকার কারণ জানা গেছে কিনা- জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘অবশ্যই কারণ ছিল। আমরাতো একটা বন্ধুপ্রতীম দেশের থেকে ওভাবে ব্যাখা চাইনি। ওনাদের সমস্যা ছিল।’
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে চীনের আশ্বাসে ঢাকা আশ্বস্ত হতে পারছে কিনা- এমন প্রশ্নও রাখা হয় ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে উদ্দেশে। তিনি বলেন, ‘আমরা চীনের নিশ্চয়তায় বিশ্বাস করি কি না করি এতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু চীন যেহেতু আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ, আমরা মনে করি তার কাছে এটা বললে চীন যথাস্থানে পৌঁছে দেবে। যতটুকু সম্ভব তাদের লেভারেজ আছে।’