সংস্কৃতিকে জীবনের দর্পণ আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শুধু অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ালেই দেশের শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ হবে না। সংস্কৃতির বিকাশে তৃণমূল পর্যায়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে বাংলার আবহমানকালের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
ঢাকার সেগুনবাগিচায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘শিল্পকলা পদক ২০১৯ ও ২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বঙ্গভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপতি।
মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি দেশীয় শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কিন্তু এটাই সবকিছু নয়। সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে আমাদের আবহমান কালের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।’
অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশে তৃণমূল পর্যায়েই উদ্যোগ নিতে হবে বলেও অভিমত রাষ্ট্রপ্রধানের।
তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনের দর্পণ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা যেমন আমাদের বাহ্যিক ভালো-মন্দ, সুন্দর-অসুন্দর দেখে নিজেদের তৈরি করে থাকি, তেমনি আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐতিহ্যও জানিয়ে দেয় জাতি হিসেবে আমরা কতটা উন্নত ও আধুনিক।’
দেশের যুবসমাজকে আধুনিক, দক্ষ ও সংস্কৃতিমনস্ক জনশক্তিতে পরিণত করতে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সংস্কৃতি ‘প্রধান অস্ত্র’ হতে পারে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিটি পরিবারেই সকালবেলায় সংগীতসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের চর্চা হতো। কিন্তু নগরসভ্যতার ক্রমবিকাশ, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার আর শহুরে জীবনের ব্যস্ততায় পারিবারিক পর্যায়ে সংস্কৃতির চর্চা ক্রমেই কমে আসছে।
‘ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে আর যুব সম্প্রদায় ফেইসবুক, ইউটিউব, টিকটক, গেমসসহ বিভিন্ন অ্যাপস-এর পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত। তাদের কাছে মোবাইল আর ল্যাপটপই বিনোদন আর খেলাধুলার প্রধান সামগ্রী। এভাবে চলতে থাকলে তারা নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকেই একদিন ভুলে যাবে।’
নতুন প্রজন্মকে সুস্থ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।
সামাজিক অবক্ষয় রোধে সংস্কৃতিকে ‘রক্ষাকবচ’ আখ্যা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সমাজ থেকে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করতে সংস্কৃতির বিকাশ খুবই জরুরি। গ্রাম থেকে শহর, নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত প্রতিটি স্তরে সংস্কৃতির চর্চা যত বেশি হবে, সমাজও ততবেশি আলোকিত হবে।
‘আলোকিত সমাজই পারে মানবিক সমাজ গড়তে, একটি দেশ ও জাতির কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে।’
কালের বিবর্তনে সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে বলেও জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সংস্কৃতিতেও এর ছোঁয়া লেগেছে। আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে প্রতিনিয়ত আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভীনদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটছে। তাই বিদেশি বা আকর্ষণীয় হলেই সবকিছু লুফে নেয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যতটুকু সামঞ্জস্য ততটুকুই গ্রহণ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয়, বিজাতীয় ও অপসংস্কৃতির সবকিছু বর্জন করতে হবে।’
শিল্পীর কদর ছাড়া শিল্পের বিকাশ কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলেও মনে করেন আবদুল হামিদ।
তিনি বলেন, ‘যে জাতি এটি করেছে সে জাতির শিল্প-সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে।’
এসময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ১৮ ব্যক্তি ও দুটি সংগঠনকে দেয়া হয় শিল্পকলা পদক ২০১৯ ও ২০২০। রাষ্ট্রপতির পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গুণীজনদের হাতে পদক তুলে দেন।