হেইয়ারে, হেইয়া আওয়াজ আর ভাদ্রের রোদেলা হাওয়া। এই দুইয়ের সম্মিলনে তিতাস নদের বুকে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘নৌকাবাইচ’।
রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে রং-বেরঙের ১২টি নৌকা অংশ নেয়।
জাঁকজমকপূর্ণ এমন নৌকাবাইচ ঘিরে পুরো জেলা শহরই উৎসবের আমেজে মেতেছিল। বাইচ দেখতে তিতাস পাড়ে হাজির হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এলাকা থেকেও বিপুলসংখ্যক মানুষ তিতাসের দুই পাড়ে ভিড় জমান।
নৌকাবাইচ দেখতে আসা সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া এলাকার সবুজ আহমেদ জানান, গত দুই বছর করোনার কারণে এই বাইচ অনুষ্ঠিত হয়নি। এতদিন পর বাইচ হচ্ছে জেনে সকালেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে আত্মীয়ের বাসায় চলে আসেন তিনি।
বাইচ দেখতে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাসনাত, শিতাব ও ইশারা জানান, এর আগে টেলিভিশনে তারা এমন প্রতিযোগিতা দেখেছেন। তবে সরাসরি দেখে আরও বেশি উপভোগ করেছেন।
প্রতিযোগিতা শুরুর আগে সরাইল উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের বিন্নিঘাট গ্রামের সফিক মেম্বার জানান, তার নৌকাটি ৬২ হাত দীর্ঘ! আর প্রতিযোগিতার মাঠে এই নৌকায় মাল্লা থাকবেন ৭৫ জন! ৮ লাখ টাকায় নৌকাটি কেনা হয়েছিল।
বিজয়নগরের সারোয়ার ভূইয়ার নৌকার মাল্লা ফজলে মিয়া বলেন, ‘অনেক দিন পর নৌকাবাইচে অংশ নিয়েছি। খুবই ভালো লাগছে। আমাদের নৌকায় মাল্লা রয়েছে ৭২ জন। ইনশাআল্লাহ আমরাই বিজয়ী হব।’
তবে দেড় কিলোমিটারের ওই বাইচে শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পক্ষে আব্দুল আলীর নৌকা বিজয়ী হয়। দ্বিতীয় হয় সদরের জাকির হোসেনের নৌকা এবং তৃতীয় অবস্থানে ছিল আশুগঞ্জের সেলিম মিয়ার নৌকা। তিনটি নৌকাই হবিগঞ্জ থেকে এসেছিল।
বিজয়ী হওয়ার পর আব্দুল আলীর নৌকাকে ট্রফিসহ নগদ ১ লাখ টাকা পুরস্কার তুলে দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
এ সময় জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান, মেয়র নাযার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আল মামুন সরকার।