বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দ্বার খুলছে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সেতুর

  •    
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৯:৪১

পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও যান চলাচল করতে পারবে রাত ১২টার পর থেকে, অর্থাৎ সোমবার মধ্যরাত থেকে।

পিরোজপুরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটির দ্বার খুলছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রোববার সকাল ১০টার দিকে সেতুটির শুভ উদ্বোধন করবেন।

পিরোজপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ সেতু উন্মুক্ত করে দেয়া হলেও যান চলাচল করতে পারবে রাত ১২টার পর থেকে, অর্থাৎ সোমবার মধ্যরাত থেকে।

এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও সেতু বিভাগ। সেতু চালুর শেষ প্রহরে এসে আনন্দে ভাসছে বরিশাল-পিরোজপুর ও খুলনাসহ দক্ষিণের প্রায় ১৬ জেলার কোটি মানুষ। এতে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বুক বাঁধছেন দক্ষিণাঞ্চলের লাখো মানুষ।

সেতুটির মাধ্যমে তাদের ব্যাবসায়িক ও জীবনমানে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছেন বরিশাল-ঝালকাঠি-পিরোজপুর-বাগেরহাট-খুলনা-যশোর আঞ্চলের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। এ ছাড়াও বরিশাল বিভাগের সঙ্গে খুলনা বিভাগের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনসহ পায়রা সমুদ্রবন্দর, মংলা সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল ও বাংলাবন্দ স্থলবন্দরকে সেতুটি সরাসরি সড়ক সংযুক্ত করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সেতুটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাসুদ মাহমুদ সুমন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর ভিত্তিপ্রস্তরের মধ্য দিয়ে বেকুটয়া পয়েন্টে এই সেতুর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেন। এ বছর ‘চায়না রেলওয়ের ১৭তম ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ রিকনাইজেন্স ডিজাইন ইনস্টিটিউট এ সেতু নির্মাণ করেছে, যার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া গত ৭ আগস্ট ২০২২ তারিখে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর উপস্থিতিতে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ইকোনমি মিনিস্টার বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি হস্তান্তর দলিলে স্বাক্ষর করেন।

তিনি বলেন, ‘প্রায় এক কিলোমিটার মূল সেতুর উভয় প্রান্তে ৪৯৫ মিটার ভায়াডাক্টসহ সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ মিটার। ৯টি স্প্যান ও ৮টি পিলারের ১৩.৪০ মিটার প্রস্থের এই সেতুর পিরোজপুর ও বরিশাল প্রান্তে এক হাজার ৪৬৭ মিটার সংযোগ সড়কসহ পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে আরও দুটি ছোট সেতু ও বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

‘এ সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে চীন সরকার। বাকি ২৪৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে। সেতুটি ১০টি পিলার এবং ৯টি স্প্যানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি বক্স গার্ডার টাইপের সেতু। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৯৮ মিটার এবং এপ্রোচ সেতুর দৈর্ঘ্য ৪৯৫ মিটার। এ ছাড়া সেতুর দুই পাড়ে রয়েছে এক হাজার ৪৬৭ মিটারের এপ্রোচ সড়ক।’

সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে কথা হয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ, পথযাত্রীদের সঙ্গে।

স্থানীয়রা জানান, এ সেতু খুলে দিলে দুই বিভাগসহ বিভিন্ন বন্দরের সঙ্গে বিভিন্ন জেলায় নিরবচ্ছিন্ন এক যোগাযোগ সৃষ্টি হয়ে ভাগ্য পরিবর্তন হবে লাখো মানুষের।

স্থানীয় বাসিন্দা মাহিন হাওলাদার বলেন, ‘আগে আমাদের বেকুটিয়া ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো। অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন জরুরি যানবাহন ফেরি না পাওয়ায় ঘাটেই অনেক সময় আটকে থাকত। সেতু উদ্বোধনে এই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হচ্ছে। অনেক ভোগান্তির হাত থেকে বেঁচে যাবে এই দক্ষিণের অনেক মানুষ।’

পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের চিথলিয়া এলাকায় শুঁটকিপল্লীর সওদাগর আকিছুর ব্যাপারী বলেন, ‘আট বছর ধরে এই শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আমরা এখান থেকে শুঁটকি নিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি। সারা বছর ৪০০ থেকে ৫০০ মণ মাছ সারা দেশে সরবরাহ করে থাকি এই শুঁটকিপল্লী থেকে। ঝড়-বন্যা, বৃষ্টি-বাদলে আমাদের শুঁটকির বেশি ক্ষতি হয়। এবার এই সেতু উদ্বোধন হলে আমাদের সময় বাঁচবে। এতে আমরা দ্রুত সময়ে শুঁটকি মাছগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব।’

দক্ষিণ উপকূলীয় পিরোজপুর জেলা মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘এ সেতুর উদ্বোধন আমাদের মৎস্য ব্যবসায়ীদের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। মৎস্য ব্যবসার প্রসার ঘটবে। আগে পিরোজপুর সদর উপজেলার বাদুড়া মৎস্য বন্দর থেকে আমাদের নৌপথে মাছ নিতে হত, যা অল্পতেই নষ্ট হয়ে যেত। এখন সেতুর কারণে সড়ক পথে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে মাছগুলো নিতে পারব। এতে আমরা মাছের আসল দাম পাব বলে আশা করছি।’

খুলনা-বাগেরহাট থেকে নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রীরা জানান, ফেরির জন্য বেশিরভাগ সময়ই অপেক্ষায় থাকতে হয়। এতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই সেতুটি উদ্বোধন হলেই আর এই ফেরির ভোগান্তি পোহাতে হবে না। কর্মস্থলে অনেক আগেই ভোগান্তি ছাড়া পৌঁছাতে পারবেন বলে আশা তাদের।

খুলনা-বরিশাল রূটের বাস চালক আমিন বলেন, ‘ফেরি মিস করলেই আমাদের প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি হত, যা এ সেতু উদ্বোধনে লাঘব হবে। যাত্রীদের সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারলে তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক ঝামেলা হয়। এই ঝামেলাগুলোতে অন্তত সেতু উদ্বোধনের পর আর পড়তে হবে না।’

জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীব জানান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটি খুব শীঘ্রই খুলে দেয়া হচ্ছে। এতে পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ব্যবসায় আমূল পরিবর্তন আসবে। সেতুটি দ্রুত পার হতে পারলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কাজের ক্ষেত্রে অনেকটাই লাভবান হবেন বলে আশা করছি।

পিরোজপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মালেক বলেন, ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর মাধ্যমে পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি। পাশাপাশি এ সেতু চালু হওয়ায় পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা স্থাপন, চিকিৎসা সেবা ও মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সেতুটি বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি করবে।’

এ বিভাগের আরো খবর