নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত তরুণ শাওন প্রধান যুবলীগ করলেও তাকে হত্যার অধিকার কারও নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, ‘একটা মানুষকে গুলি করে হত্যার অধিকার আপনাদের নেই।’
বৃহস্পতিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংঘর্ষে প্রাণহানির পরদিন ফখরুল যান রাজধানী লাগোয়া এই জনপদে।
দুপুর ১২টার দিকে ফতুল্লার নবীননগর এলাকায় গিয়ে তিনি শাওনের মা ও পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন। পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
এ ঘটনায় শাওনের ভাই গত রাতে যে মামলা করেছেন, তাতে তিনি দায় দিয়েছেন বিএনপিকে, আসামি করেছেন দলটির পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে।
মামলায় বলা হয়েছে, তার ভাই হেঁটে যাওয়ার সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করে। এ সময় অবৈধ অস্ত্রের আঘাতে শাওন লুটিয়ে পড়ে।
শাওনের মৃত্যুর পর বিএনপি তাকে সহযোগী সংগঠন যুবদলের কর্মী হিসেবে দাবি করে। তবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ দাবি করেছেন, এই যুবক এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাতিজা, তার যুবদল করার প্রশ্নই ওঠে না।
ফখরুল বলেন, ‘এখন বলা হচ্ছে, শাওন নাকি যুবদলের কর্মী নন, যুবলীগ করেন। আমি বলি, সে যা-ই করুক তাকে তো হত্যা করা যাবে না।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘শাওনকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছে। পুলিশের এসপি সাহেব বলছেন, সে নাকি যুবদলের কর্মী নয়। সে যুবদলের কর্মী না হলেও একটা মানুষকে গুলি করে হত্যা করার অধিকার আপনাদের নেই।
‘সে একটা ওয়েল্ডিং ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, একজন শ্রমিক, একজন যুবদল নেতা; তাকে আপনারা হত্যা করেছেন।’
গুলি করা ‘পয়েন্ট ব্ল্যাংক থেকে’
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, বিনা উসকানিতে শাওনের বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পয়েন্ট ব্ল্যাংক থেকে গুলি করে তাকে হত্যা করেছে এবং অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে।’
পুলিশকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি আপনাদের অনুরোধ করব, বারবার করে আহ্বান জানাব, অন্যায় কোনো রকম হুকুম আপনারা মানবেন না। নিরীহ মানুষের ওপর গুলি করবেন না। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অবশ্যই আপনারা করতে দেবেন।
‘পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ভাইদের অনুরোধ করব, আপনারা আমাদের শত্রু নন। আপনারা আমাদের এই মানুষের সন্তান, আমাদেরই সন্তান, স্বাধীনতা রক্ষা করা আপনাদের দায়িত্ব। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের কথা শুনে নিরীহ জনগণের ওপর গুলি চালানো আপনাদের দায়িত্ব নয়।’
শাওনকে যারা গুলি করেছে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের দাবিও জানান ফখরুল।
রাতে দাফনের সমালোচনা
শাওনের মরদেহ পুলিশ পাহারায় রাতে সমাহিত করারও সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘তারা এতটাই অমানবিক যে গভীর রাতে গোপনে শাওনের লাশ দাফন করিয়েছে। এই যে অমানবিক কার্যকলাপ, এই যে মানুষের বিরুদ্ধে কাজ, এই যে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অপরাধ, এই অপরাধের নিশ্চয় একদিন বিচার হবে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘শাওনকে হত্যা শুধু ব্যক্তি নয়, একটি আদর্শকে হত্যা। মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামকে হত্যা করা হয়েছে।
‘এ ফ্যাসিবাদী সরকার হত্যা-গুম করে দমিয়ে রাখতে চায়। এ ঘটনায় আগামীকাল সারা দেশে প্রতিবাদ সভা হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আমরা গণতন্ত্রের জন্য বারবার সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি। এই সরকার গুলি করে হত্যা করে, গুম করে আন্দোলনকে দমন করে রাখতে চায়। জিনিসপত্রের দাম যখন বাড়ছে, তখন তার প্রতিবাদ করতে গেলে তারা হত্যা করছে। তারা মানুষকে অত্যাচার করছে, নির্যাতন করছে।’
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিসহ স্থানীয় বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।